রাখাইনে তীব্র লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুত ৯ হাজার মানুষ

রাখাইনে তীব্র লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুত ৯ হাজার মানুষ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই তীব্র হয়েছে। রাখাইনে কামান দিয়ে গোলা নিক্ষেপ, বেসামরিক সম্পদ ধ্বংস এবং কয়েকটি এলাকায় চলাচলে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ও গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয়কের দপ্তর গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারজুড়েই সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের বিরোধী সশস্ত্র নৃগোষ্ঠী ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের লড়াই বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সুরক্ষায় বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এদিকে রাখাইনে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও উপকূলরক্ষী বাহিনী কোস্ট গার্ডকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে প্রত্যাবাসন দুরূহ হয়ে পড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবও জাতিসংঘে ভাষণে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরকালে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আবুধাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে মিয়ানমার, ফিলিস্তিনের মতো সংকটগুলো তুলে ধরবে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কের দপ্তর গতকাল জানায়, সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও কামানের গোলার কারণে গত শুক্রবার রাখাইন রাজ্যের বুথিডং এলাকায় প্রায় ৩০০ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর ফলে গত আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ১৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

জাতিসংঘ জানায়, সড়ক বন্ধ, বর্ধিত তল্লাশি কেন্দ্রসহ জনগণের চলাচলে বিধি-নিষেধ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে নতুন নতুন হস্তক্ষেপে রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত ও এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনে আরো দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

কাচিন রাজ্যের সুয়েগু এলাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকে মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী ও জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের লড়াইয়ের কারণে তিনটি গ্রাম থেকে প্রায় ৪০০ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বিমান হামলা ও কামানের গোলার কারণে দক্ষিণ শানের মোয়েবে শহর থেকে কায়াহ রাজ্যের লোইকাও শহর পর্যন্ত এলাকার সাড়ে ৫০০ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ গত সোমবার জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদকে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি অবহিত করেছেন। সেখানে তিনি মিয়ানমার থেকে কামানের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ার কথাও উল্লেখ করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *