হাবিবা আক্তার: নবি-রাসুলগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানবজাতির ওপর তাঁদের সাধারণ শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তবে নবি-রাসুলদের পারস্পরিক মর্যাদায় তারতম্য রয়েছে। মহান আল্লাহ্ মহানবী (সা.)-কে পৃথিবীর সব নবি ও রাসুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) সৃষ্টির সেরা এবং আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি। তাঁর এমন অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁকে সব নবি-রাসুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া: ১/৩১৩)
নবিজির মর্যাদার নানা দিক: পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত মহানবির শ্রেষ্ঠত্বের কয়েকটি দিক হলো-
১. সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী: মহান আল্লাহ্ নবি-রাসুলদের ভেতর মহানবি (সা.)-কে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এই রাসুলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে, যার সঙ্গে আল্লাহ্ কথা বলেছেন, আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’ (সূরা বাকারা ২: আয়াত ২৫৩)
আল্লামা জমখশারি (রহ.) বলেন, এটা স্পষ্ট যে ‘উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন’ এই বাক্যটি মহানবি (সা.)-ই উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ্ তাঁকে এমন অনন্য মর্যাদা দান করেছেন, যা অন্য কাউকে দান করা হয়নি। যেমন-তাঁকে সহস্রাধিক নিদর্শন দান করা হয়েছে। (তাফসিরে জমখশারি: ১/২৯৭)
২. বিশেষ পাঁচ বৈশিষ্ট্য দান: হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোনো নবিকে দান করা হয়নি। তা হলো-
এক. আমাকে এমন প্রখর ব্যক্তিত্ব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, এক মাস দূরত্বেও যা প্রতিফলিত হয়।
দুই. আমার জন্য জমিনকে পবিত্র করা হয়েছে এবং নামাজের স্থান বানানো হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের যেখানেই নামাজের সময় হবে, সেখানেই নামাজ পড়তে পারবে।
তিন. আমার জন্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হালাল করা হয়েছে, যা আমার আগে কারো জন্য হালাল ছিল না।
চার. আমাকে (ব্যাপক) সুপারিশের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ. আগের সব নবিকে তাঁদের স্বজাতি ও গোত্রের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৪৩৮)
৩. পরকালে বিশেষ সুপারিশ: হযরত রাসুল (সা.) কিয়ামতের দিন বিশেষ সুপারিশের অধিকার লাভ করবেন। দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ‘(আল্লাহ্ বলেন) তোমার প্রতিটি নিবেদনের পরিবর্তে আমি তোমাকে যা দিয়েছি এর বাইরেও আরো নিবেদন অধিকার তোমার রইল।
তুমি তা চাইতে পারো। হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্! আপনি আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্! আপনি আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন, আর তৃতীয় আবেদনটি আমি এমন এক দিনের জন্য পিছিয়ে রাখলাম যেদিন সব সৃষ্টি আমার সুপারিশের দিকে চেয়ে থাকবে। এমনকি ইবরাহিম (আ.)-ও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮২০)
৪. সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ: মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম মহানবি (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তাঁর আগে কোনো নবি-রাসুলও জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর দেবো, মোহাম্মদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারো জন্য দরজা খুলিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৩৭৪)
৫. সবচেয়ে বেশি উম্মত: কিয়ামতের দিন মহানবি (সা.) সর্বাধিক উম্মত নিয়ে হাজির হবেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সব নবির চেয়ে সর্বাধিক এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৩৭২)
৬. শেষ নবি: মহানবি (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্ নবুয়তের ধারা সম্পন্ন করেছেন। তিনি ছিলেন আল্লাহ্র শেষ নবি। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহ্র রাসুল এবং শেষ নবি। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আহজাব ৩৩: আয়াত ৪০)
মহান আল্লাহ্ মহানবি (সা.), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবিদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন।