মো. আবদুল মজিদ মোল্লা: নবি-রাসুলদের স্মৃতিধন্য ও বরকতময় ভূমি আল-আকসা। যেখানে অসংখ্য নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহ্ প্রেমের সাধনা করেছেন। তাই আধ্যাত্মিক সাধক ও সুফিদের আল-আকসা অত্যন্ত প্রিয় স্থান। জগদ্বিখ্যাত সুফিদের মধ্যে যাঁরা আল-আকসায় আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের সাধনা করেছেন, তাঁদের অন্যতম হযরত রাবেয়া বসরি (রহ.)।
খ্রিষ্টীয় ৮ম শতকের বিখ্যাত নারী সাধক রাবেয়া আল-আদাবিয়্যা, যিনি রাবেয়া বসরি নামে বেশি পরিচিতি। তিনি জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় অতিবাহিত করেছেন জেরুজালেমে। তিনি বসরার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু ধার্মিকতা ও সাধনার মাধ্যমে তিনি যুগশ্রেষ্ঠ সুফি সাধকে পরিণত হন। জগদ্বিখ্যাত আলেম সুফিয়ান সাওরি (রহ.) ও শুবা ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.) ছিলেন তাঁর শিষ্য।
রাবেয়া বসরি (রহ.) ছিলেন একজন দাসী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একদিন এক পুরুষ আগন্তুককে তাঁর পালিয়ে যাওয়া দেখে মালিক তাঁকে মুক্ত করে দেন। মুক্ত হওয়ার পর তিনি জেরুজালেম চলে আসেন এবং সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা ও মানবসেবায় জীবন কাটিয়ে দেন।
বলা হয়ে থাকে তিনি ছিলেন ‘ঐশ্বরিক ভালোবাসা’ ধারণার পথপ্রদর্শক। সুফি সাধক হিসেবে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, যা অন্যান্য সাধক ও আলেমকে আল-আকসার প্রতি আকৃষ্ট করে। ‘আল্লাহ্প্রেমে’ উৎসর্গিত জীবন কাটিয়ে জেরুজালেমেই তিনি ওফাত লাভ করেন। জেরুজালেমের ‘তুর জেইতা’ পাহাড়ের চূড়ায় তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ্র প্রেমে সিক্ত তাঁর কথামালা বিশ্বাসীদের অন্তরে গভীর রেখাপাত করে এবং আল্লাহ্র প্রেম জাগিয়ে তোলে।
এক কবিতায় তিনি বলেন, ‘আমি যদি জাহান্নামের ভয়ে আপনার ইবাদত করি/ তবে আমাকে জাহান্নামে জ্বালিয়ে দিন/ আমি যদি বেহেশতের আশায় আপনার ইবাদত করি/ তবে আমার জন্য জান্নাতকে তালাবদ্ধ করুন/আর আমি যদি কেবল আপনার জন্য আপনার ইবাদত করি/ তবে আমাকে আপনার চিরন্তন সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করবেন না।’
প্রখ্যাত আলেম ও সুফি সাধক ইবনুল জাওজি (রহ.) ও ফরিদুদ্দিন আত্তার (রহ.) ছিলেন রাবেয়া বসরি (রহ.) দ্বারা প্রভাবিত আলেমদের অন্যতম। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের মধ্যে ইমাম গাজালি (রহ.) ছিলেন তাঁর দ্বারা বেশি প্রভাবিত।