ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩০০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব

ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩০০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: বিভিন্ন বাণিজ্য বাধা কমিয়ে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩০০ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)। ব্যবসায়ী এই সংগঠনটির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এই সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে আইসিসিবি বলেছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বর্তমান রপ্তানি ১৮২ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে পরিবহন সংযোগ উন্নত করে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৯৭ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ আছে। বাংলাদেশ এই পরিমাণ রপ্তানি বাড়ালেও সেটি ভারতের মোট আমদানির মাত্র এক শতাংশ পূরণ করবে বলে বুলেটিনে তুলে ধরা হয়েছে। আইসিসিবি বুলেটিনের সম্পাদকীয়টি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে আরও বলা হয়, বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২২ সালে ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি ছিল মাত্র ১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইসিসিবি বলছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশ তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় দূরবর্তী অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্য বেশি করে। বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি কোম্পানির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য করা কম ব্যয়বহুল। তবে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি একটি সুযোগ বলে তুলে ধরা হয়েছে বুলেটিনে। আইসিসিবি বলছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও লজিস্টিক নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বুলেটিনে বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, বাণিজ্য ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাংকের মতে, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে উল্লেখযোগ্য মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য এখন সেই বাণিজ্য সম্ভাবনার মাত্র এক-পঞ্চমাংশে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিবিআইএন দেশগুলো- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল নিজেদের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার মূলধন সাশ্রয় করতে পারে। পরিবহন ও সেবার উন্নতির মাধ্যমে ওইসিডি দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কনটেইনার চলাচলের জন্য ৫০ শতাংশ বেশি খরচ কমাতে পারে। সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ১৯৯৩ সালে সাপটা চুক্তি করে, যা ২০০৬ সালে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা সাফটায় রূপান্তরিত হয়। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-শ্রীলঙ্কা, ভারত-ভুটান এবং পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা এই তিনটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত নেপালকে নিয়ে ২০১৫ সালে বিবিআইএন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা উপআঞ্চলিক সহযোগিতার আরেকটি উদ্যোগ। এতকিছুর পরও দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সম্ভাবনার অনেক কম। বর্তমানে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য আনুমানিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা সম্ভাব্য বাণিজ্য প্রবাহের মাত্র ৫ শতাংশ। বিবিআইএন দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করতে না পারা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির সুযোগগুলো অব্যবহৃত থাকার কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য বাড়ছে না বলে আইসিসিবি বুলেটিনে তুলে ধরেছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *