আলেমা হাবিবা আক্তার: আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, ব্রাজিলে ১৩ মিলিয়নেরও বেশি আরব বসবাস করে। লাতিন আমেরিকার একটি বৃহৎ অভিবাসী জনগোষ্ঠী হওয়ার পরও আরব সমাজের সঙ্গে চমৎকারভাবে একীভূত হতে পেরেছে। ফলে ব্রাজিলের শিল্প-সংস্কৃতিতে আরব শিল্পী ও আরব সংস্কৃতির জোরালো প্রভাব রয়েছে। ব্রাজিলের সংগীত, কবিতা, ক্যালিগ্রাফি, নাটক, কারুশিল্প, নকশা, স্থাপত্য ও ডিজিটাল, অর্থাৎ পুরো শিল্প জগত্টাই আরব সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত।
ব্রাজিলে আরব সংস্কৃতির প্রসারে শুধু আরবরাই ভূমিকা রাখছে না, বরং বহু ব্রাজিলীয় এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। ব্রাজিলিয়ান নারী ক্যামিলা ক্লেইন তাঁদের একজন।
ক্যামিলা ক্লেইন ব্রাজিল ও আরববিশ্বের মধ্যে এটি সেতুবন্ধ তৈরি করেছেন। তিনি তাঁর পেশার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে আরব ও ব্রাজিলীয় সংস্কৃতির মধ্যে বহু অভিন্ন বিষয় রয়েছে।
বিশেষত যখন আরব সংস্কৃতি ব্রাজিলীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরব দেশগুলোর সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ব্রাজিলের অগ্রাধিকার রয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রসার তাঁদের দেশ ও সমগ্র অঞ্চলে সহনশীলতা ও সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক। শৈশবেই আরব জগৎ ক্যামিলা ক্লেইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
তাঁর মা রোজাঙ্গেলা ক্লেইনের আরব বন্ধুরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় করে থাকতেন। তখন থেকেই তাঁর ভেতর আরব সংস্কৃতি ও শিল্পকলা সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে, যা কখনো থেমে যায়নি। এরপর বহু বছর পর তিনি তাঁর ব্যবসার একটি অংশ আরব শিল্পকলার জন্য বরাদ্দ করেন। রিও ডি জেনেইরো, কুরিটিবা, সাও পাওলো, ক্যাম্পিয়ানস ও রেসিফিতে ক্লেইনের ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের তৈরি পাথরে বেল্ট, কানের দুল ও বড় নেকলেস ব্রাজিলে বসবাসরত আরব নারীদের কাছে জনপ্রিয়।
সম্প্রতি তিনি ‘দ্য ওয়াসিস কালেকশন’ নামের নতুন কিছু পণ্য বাজারে এনেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের রানি ও রাজকন্যাদের থেকে শুরু করে সাধারণ নারীরা তাঁর নতুন সংগ্রহের অনুপ্রেরণা। এবার তিনি ১০০টি নতুন পণ্য এনেছেন। তিনি তা কাতার সফরের সময় সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় কাতারের সাবেক ফার্স্ট লেডি শায়খা মোজা বিনতে নাসির আল মিসনেদকে পছন্দ করি। তিনি অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী একজন নারী। তিনি যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পরিশীলিত। ২০২০ সালে আমি আমন্ত্রিত হয়ে কাতারে গেলে আরব সংস্কৃতির সঙ্গে আরো পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়।’
লেটিসিয়া গোমেজের বয়স ২৮ বছর। করোনা মহামারির সময় ইসলামি ও আরব শিল্পকলা নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আরব শিল্পকলাকে ভিত্তি করে বুকমার্ক ও ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। অনলাইনে এ কাজে সাড়া পাওয়ার পর তিনি তাঁর পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। গোমেজ মসজিদ পরিদর্শন শুরু করার পর তিনি জ্যামিতি, ক্যালিগ্রাফি ও আরাবিস্ক দেখে মুগ্ধ হন এবং বিষয়গুলো আত্মস্থ করার চেষ্টা করেন। এরপর আরব শিল্পকলা ও বর্ণখচিত বুকমার্ক তৈরি শুরু করেন। গোমেজের ভাষ্য মতে, তাঁর গ্রাহকদের ৬০ শতাংশ ব্রাজিলে বসবাসরত আরব। তবে অনারবরাও তাঁর পণ্যের ব্যাপারে আগ্রহী। বুকমার্ক ছাড়াও গোমেজ বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের অঙ্গসজ্জার কাজ করেন।
মারিয়াম সুজা সাও পাওলোর একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। ইসলামি শিল্পকলায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি শহরের একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাস করেন। তিনি নিজে যেমন আরব শিল্পকলার চর্চা করেন, তেমন অন্যদেরও উৎসাহিত করেন। তিনি ব্রাজিলের মানুষের সামনে আরব শিল্পকলার সৌন্দর্য তুলে ধরতে চান। কেননা ব্রাজিলের প্রকৃতি ও পরিবেশ আরব শিল্পকলার অনুকূল এবং শিল্প ও শিল্পীর প্রতি ব্রাজিলীয়দের ভালোবাসা স্বভাবজাত। শিল্পকলাই উভয় অঞ্চলের মানুষের ভেতর সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে।