বাণিজ্য ডেস্ক: প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আর আবাদ বাড়ায় বিশ্বজুড়ে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন। কিন্তু এতে ক্রমেই শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপকতা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যশস্যের ক্ষতির মুখে পড়ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে গত ৩০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য ও পশু উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। যা গড়ে বছরে দাঁড়ায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার। যা বৈশ্বিক কৃষির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। সম্মিলিত হিসাবে বছরে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন টন লোকসান হচ্ছে, যা ২০২২ সালে ব্রাজিলের প্রকৃত জিডিপির সমান।
‘দি ইমপেক্ট অব ডিজাসটার্স অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই প্রথমবারের মতো প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে বিশ্বে কৃষিখাতের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করা হয়েছে। বিশেষত খাদ্যশস্য ও পশু সম্পদের ক্ষতির হিসাব এখানে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ক্ষতির এই অঙ্ক আরো বড় হতো যদি আরো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যেত। প্রতিবেদনে এফএওর মহাপরিচালক কিউইউ ডনজিউ বলেন, ‘দুর্যোগের কারণে বিশ্বের অন্যতম নাজুক খাত কৃষি। কারণ এ খাত প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন দুর্যোগের কারণে খাদ্যনিরাপত্তায় আমাদের অর্জন ব্যাহত হচ্ছে ও টেকসই কৃষিব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলো। এই ক্ষতির পরিমাণ দেশগুলোর কৃষি জিডিপির ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। বলা হয়, আবশ্যকীয় কৃষি পণ্যে লোকসান প্রবণতা বাড়ছে। যেমন—গত তিন দশকে প্রতিবছরে গড়ে খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে ৬৯ মিলিয়ন টন, যা ২০২১ সালে ফ্রান্সের মোট উৎপাদিত খাদ্যশস্যের সমান। এর পাশাপাশি ফল, সবজি ও আখের ক্ষতি হয়েছে বছরে গড়ে ৪০ মিলিয়ন টন। ফল ও সবজিতে যে পরিমাণ লোকসান হচ্ছে এক বছরে তা জাপান ও ভিয়েতনামের ২০২১ সালের ফল ও সবজি উৎপাদনের সমান।
অন্যদিকে মাংস, দুগ্ধপণ্য ও ডিমে গড়ে লোকসান বছরে ১৬ মিলিয়ন টন, যা ২০২১ সালে মেক্সিকো ও ভারতের মোট মাংস, দুগ্ধপণ্য ও ডিম উৎপাদনের সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্চলিক হিসাবে অর্থনৈতিক লোকসান সবচেয়ে বেশি হচ্ছে এশিয়া অঞ্চলে, যা আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার সম্মিলিত লোকসানের সমান। যদিও এশিয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কৃষির সংযোজিত মূল্যের ৪ শতাংশ। বলা হয়, ১৯৭০-এর দশকে বিশ্বে দুর্যোগের ঘটনা ছিল বছরে ১০০টি। সেখানে গত ২০ বছরে তা বেড়ে বছরে ৪০০টিতে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগে খাদ্য উৎপাদনে ক্ষতির কারণে পুষ্টিগুণও হারাচ্ছে মানুষ। পুষ্টি হারানোর পরিমাণ এশিয়ায় প্রায় ৩১ শতাংশ, আমেরিকায় ৩১ শতাংশ, ইউরোপে ২৪ শতাংশ, আফ্রিকায় ১১ শতাংশ এবং ওশেনিয়া অঞ্চলে ৩ শতাংশ।