বৈশ্বিক অস্থিরতায় বাড়ছে অর্থনৈতিক ঝুঁকি

বৈশ্বিক অস্থিরতায় বাড়ছে অর্থনৈতিক ঝুঁকি

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: সারা বিশ্ব আজ বড় অস্থির। করোনা মহামারি হতে বিশ্ববাসী পরিত্রাণ পেয়েছেন। এজন্য তাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে বিশ্বে নূতন করে যে যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দিয়াছে, তাহা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো মীমাংসা না হতেই ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে অস্থির হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনে বিশ্বের এক নম্বর গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার হামলা আজও চলমান। অন্যদিকে বিশ্বের মোট তেলের ৫২ শতাংশ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪৩ শতাংশের মজুতের অধিকারী মধ্যপ্রাচ্য আবার অশান্ত। ফলে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির সরবরাহ ও নিরাপত্তা আজ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। এতে দেশে দেশে দেখা দিয়েছে অসহনীয় মূল্যস্ফীতি। ২০২০ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি যেখানে ছিল ১.৯৩ শতাংশ, সেখানে ইহা গত বছর ছিল ৮.২৭ শতাংশ। এই বছর শেষ নাগাদ তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আমরা কেহ জানি না। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিশ্ববাসীকে আজ দিশাহারা করে তুলেছে।


উপর্যুক্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশ-সহ উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলির অবস্থা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। করোনার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ছিল বেশ সন্তোষজনক। এশিয়ার টাইগার হিসাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনা ও যুদ্ধের অভিঘাত আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এর উপর নির্বাচনি বছরে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো এখানেও অর্থনৈতিক চাপ থাকাটা অস্বাভাবিক নহে। কেননা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠলে অর্থনীতিতে তাহার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্তসহ বিপাকে পড়ে সামষ্টিক অর্থনীতি। সরকারের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ও টাকার অবমূল্যায়ন এই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে বড় অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ, তবে বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী তাহা হতে পারে ৫.৬ শতাংশ। আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ীও আমরা রয়েছি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে। আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স হ্রাস, শিল্প খাতে বিপর্যয়, শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপণ্য চাহিদামতো স্থানান্তর সংকট, রাজস্ব আদায়ে ধস, রিজার্ভ হ্রাস, ডলার-সংকট, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন হুমকির মুখে।


প্রতিকূল আবহাওয়া, জ্বালানিসংকট, অর্থপাচার, করপোরেট সুশাসনের অভাব প্রভৃতি কারণও দায়ী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য। মর্গান স্ট্যানসির গবেষণায় অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন যে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন হবে ২.৯ শতাংশ, যাহা গত বছর ছিল ৩.৪ শতাংশ। তবে বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্দশা হতে উদ্ধার করতে এবং সম্ভাব্য আরেকটি ভয়াবহ বিশ্বমন্দা হতে রক্ষা পেতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করা। কিন্তু দুশ্চিন্তায় থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নেতাদের এই আবেদন কি বিশ্বনেতাদের কর্ণকুহরে আদৌ পৌঁছাবে বা পৌঁছালেও কি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে? এই পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত দেশগুলি বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে পারলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য তা হতে পারে বিপজ্জনক। তাই এই মুহূর্তে উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতাদের উচিত নিজেদের বিরোধ-বিসংবাদ যতখানি সম্ভব দূরে ঠেলে দেওয়া ও জাতীয় অর্থনীতিকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *