সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অর্থনীতির ওপর সম্প্রতি একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে সাতটি সংকট বিরাজ করছে। এগুলো হলো-ডলার সংকট, জ্বালানির উচ্চমূল্য, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি। প্রতিষ্ঠানটির মতে, বাংলাদেশে খাদ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে। স্পষ্টতই দেশেও এর প্রভাব পড়বে। উদ্বেগজনক হলো, এ পরিস্থিতি ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইতোমধ্যে দেশের মানুষ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিপিডির প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন-সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের আমদানিতে কর রেয়াত দেওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট ভাঙা, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারে ভর্তুকি প্রদান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে সিপিডি, যার গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিছুদিন আগে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়েছিল-মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ, যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; উপরন্তু মুদ্রাবাজারেও অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় পরিকল্পিত মুদ্রানীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সরকার অবশ্য সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে এ বছর চালের উৎপাদন কম হয়েছে; বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমনের চাষ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। এ কথা সত্য, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে-সরকারের তরফ থেকে এমনটি বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতার সঙ্গে সরকারের বক্তব্যের যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামোর করুণ পরিণতির ব্যাপারে অনেক আগেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। যেমন-আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মন্তব্য ছিল, করোনার অভিঘাতে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা যে কোনো আর্থিক মন্দার চেয়ে খারাপ হবে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত কিনা, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ অতিক্রম করে এগিয়েছে। দেশের পরিশ্রমী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। আশা করা যায়, এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন তারা। তবে এজন্য সরকারকে সঠিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
- April 11, 2023
0
92
Less than a minute
You can share this post!
editor