বাণিজ্য ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে মন্দার উৎকণ্ঠার মধ্যেও গভীর সমুদ্রবাণিজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ এবং অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ খাতে দেশীয় জনবলের কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে। সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির এক দশক পরে এসে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ধারাবাহিক বিনিয়োগ এবং প্রচেষ্টায় গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ ৯০টি। চলতি বছরেই গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৯টি জাহাজ জলে ভাসিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ডিসেম্বরের মধ্যেই আরও কয়েকটি জাহাজ রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সমুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বাড়ছে। এই খাতে সরকারের নীতিসহায়তা দেওয়া শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। ২০১৮ সালে শর্তসাপেক্ষে জাহাজ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রেখে ফ্লাগ ভেসেল প্রোটেকশন আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আগাম কর প্রত্যাহার, পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানির পর বিক্রয়ের সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের বাজেটে বিদেশি পণ্য পরিবহন করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, তার ওপর করভার আট বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব নীতিসহায়তার সুফল হিসেবে প্রতি বছরই সমুদ্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ২০১৯ সালে যেখানে সমুদ্রগামী বাংলাদেশি জাহাজ ছিল ৪৭টি, সেখানে ২০২০ সালে এটি বেড়ে হয় ৬৪টি, ২০২১ সালে ৭৩টি এবং চলতি বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০টি বাংলাদেশি জাহাজ সমুদ্রে ভাসছে। গত তিন বছরে এই খাতে নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে ৪৫টি। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এই খাত থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১১০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এর পাশাপাশি সাশ্রয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। কারণ, দেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলোর কয়েকটি তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহনের জন্য সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। এতে তাদের আমদানি করা পণ্যের ভাড়া সাশ্রয় হচ্ছে। যা আগে বিদেশি কোম্পানির জাহাজকে ভাড়া হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হতো। বর্তমানে বাংলাদেশি এই জাহাজগুলোর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা প্রায় ৭১ লাখ টন। বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি নাবিকসহ সমুদ্র পেশাজীবীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে দেশীয় জাহাজে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ২৩টি জাহাজ চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রিরোলিং মিলের (কেএসআরএম)। বিনিয়োগে দ্রুত সামনে উঠে আসা মেঘনা গ্রুপের জাহাজ সংখ্যা ২২টি। তারা চলতি মাসেই চারটি জাহাজ সমুদ্রে ভাসিয়েছেন। আকিজ গ্রুপের সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে ১০টি। সরকারের মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ এখন আটটি। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ ও কর্ণফুলী গ্রুপের রয়েছে ছয়টি করে জাহাজ। এসব উদ্যোক্তা নিজেদের পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যেই সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বিনিয়োগ শুরু করেন। বড় শিল্প গ্রুপের বাইরে গত দুই বছরে সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসায় নেমেছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গত বছর সানশাইন নেভিগেশন লিমিটেড ৫৬ হাজার টন পণ্য পরিবহন ক্ষমতার একটি জাহাজের নিবন্ধন নিয়েছে। এ বছর হানিফ মেরিটাইম লিমিটেড ১ লাখ ১৩ হাজার টন পণ্য পরিবহন ক্ষমতার দুটি জাহাজ পানিতে ভাসিয়েছে। এ ছাড়া পিএনএন শিপিং লাইনস, পিএইচ নেভিগেশন, দরিয়া শিপিং লিমিটেড ও ডরিন শিপিং লাইনস পাঁচটি জাহাজ পানিতে ভাসিয়েছে।
বাংলাদেশের জাহাজ মালিকদের বহরে থাকা সমুদ্রগামী জাহাজের অধিকাংশই একসঙ্গে ৫০-৫৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন করতে পারে। এর বাইরে রয়েছে ফিডার জাহাজ, যা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কনটেইনার আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত। কর্ণফুলী গ্রুপের কনটেইনার পরিবাহী জাহাজগুলো ফিডার সার্ভিসে নিয়োজিত। তেল পরিবহনকারী বড় জাহাজ রয়েছে একটি, যেটি ১ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে পারে। এছাড়া রয়েছে এলপিজি পরিবহনকারী জাহাজও। দেশের উদ্যোক্তারা যেসব জাহাজ কিনে সাগরে ভাসিয়েছেন, সেগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন মেয়াদের পুরনো জাহাজ। বর্তমানে যেসব জাহাজ নিবন্ধিত হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগ মূলত করোনার সময় কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন উদ্যোক্তারা। তখন বিশ্ববাজারে পুরনো জাহাজের দাম অনেক কমে যায়। বর্তমানে জাহাজের দাম আবার বেড়ে গেছে। এরপরও এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। জাহাজের নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা নৌবাণিজ্য কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের ধারাবাহিক নীতিসহায়তার কারণেই এ খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এ খাতে নাবিকসহ দক্ষ জনবলও রয়েছে আমাদের। সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশীয় জনবল কাজে লাগছে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ বাড়ছে
বাণিজ্য ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে মন্দার উৎকণ্ঠার মধ্যেও গভীর সমুদ্রবাণিজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ এবং অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ খাতে দেশীয় জনবলের কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে। সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির এক দশক পরে এসে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ধারাবাহিক বিনিয়োগ এবং প্রচেষ্টায় গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ ৯০টি। চলতি বছরেই গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৯টি জাহাজ জলে ভাসিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ডিসেম্বরের মধ্যেই আরও কয়েকটি জাহাজ রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সমুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বাড়ছে। এই খাতে সরকারের নীতিসহায়তা দেওয়া শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। ২০১৮ সালে শর্তসাপেক্ষে জাহাজ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রেখে ফ্লাগ ভেসেল প্রোটেকশন আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আগাম কর প্রত্যাহার, পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানির পর বিক্রয়ের সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের বাজেটে বিদেশি পণ্য পরিবহন করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, তার ওপর করভার আট বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব নীতিসহায়তার সুফল হিসেবে প্রতি বছরই সমুদ্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ২০১৯ সালে যেখানে সমুদ্রগামী বাংলাদেশি জাহাজ ছিল ৪৭টি, সেখানে ২০২০ সালে এটি বেড়ে হয় ৬৪টি, ২০২১ সালে ৭৩টি এবং চলতি বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০টি বাংলাদেশি জাহাজ সমুদ্রে ভাসছে। গত তিন বছরে এই খাতে নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে ৪৫টি। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এই খাত থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১১০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এর পাশাপাশি সাশ্রয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। কারণ, দেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলোর কয়েকটি তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহনের জন্য সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। এতে তাদের আমদানি করা পণ্যের ভাড়া সাশ্রয় হচ্ছে। যা আগে বিদেশি কোম্পানির জাহাজকে ভাড়া হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হতো। বর্তমানে বাংলাদেশি এই জাহাজগুলোর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা প্রায় ৭১ লাখ টন। বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি নাবিকসহ সমুদ্র পেশাজীবীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে দেশীয় জাহাজে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ২৩টি জাহাজ চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রিরোলিং মিলের (কেএসআরএম)। বিনিয়োগে দ্রুত সামনে উঠে আসা মেঘনা গ্রুপের জাহাজ সংখ্যা ২২টি। তারা চলতি মাসেই চারটি জাহাজ সমুদ্রে ভাসিয়েছেন। আকিজ গ্রুপের সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে ১০টি। সরকারের মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ এখন আটটি। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ ও কর্ণফুলী গ্রুপের রয়েছে ছয়টি করে জাহাজ। এসব উদ্যোক্তা নিজেদের পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যেই সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বিনিয়োগ শুরু করেন। বড় শিল্প গ্রুপের বাইরে গত দুই বছরে সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসায় নেমেছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গত বছর সানশাইন নেভিগেশন লিমিটেড ৫৬ হাজার টন পণ্য পরিবহন ক্ষমতার একটি জাহাজের নিবন্ধন নিয়েছে। এ বছর হানিফ মেরিটাইম লিমিটেড ১ লাখ ১৩ হাজার টন পণ্য পরিবহন ক্ষমতার দুটি জাহাজ পানিতে ভাসিয়েছে। এ ছাড়া পিএনএন শিপিং লাইনস, পিএইচ নেভিগেশন, দরিয়া শিপিং লিমিটেড ও ডরিন শিপিং লাইনস পাঁচটি জাহাজ পানিতে ভাসিয়েছে।
বাংলাদেশের জাহাজ মালিকদের বহরে থাকা সমুদ্রগামী জাহাজের অধিকাংশই একসঙ্গে ৫০-৫৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন করতে পারে। এর বাইরে রয়েছে ফিডার জাহাজ, যা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কনটেইনার আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত। কর্ণফুলী গ্রুপের কনটেইনার পরিবাহী জাহাজগুলো ফিডার সার্ভিসে নিয়োজিত। তেল পরিবহনকারী বড় জাহাজ রয়েছে একটি, যেটি ১ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে পারে। এছাড়া রয়েছে এলপিজি পরিবহনকারী জাহাজও। দেশের উদ্যোক্তারা যেসব জাহাজ কিনে সাগরে ভাসিয়েছেন, সেগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন মেয়াদের পুরনো জাহাজ। বর্তমানে যেসব জাহাজ নিবন্ধিত হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগ মূলত করোনার সময় কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন উদ্যোক্তারা। তখন বিশ্ববাজারে পুরনো জাহাজের দাম অনেক কমে যায়। বর্তমানে জাহাজের দাম আবার বেড়ে গেছে। এরপরও এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। জাহাজের নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা নৌবাণিজ্য কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের ধারাবাহিক নীতিসহায়তার কারণেই এ খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এ খাতে নাবিকসহ দক্ষ জনবলও রয়েছে আমাদের। সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশীয় জনবল কাজে লাগছে।