দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বৈশ্বিক মন্দা আর মূল্যস্ফীতির প্রভাবে তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজারগুলোতে কার্যাদেশ নিয়ে উদ্যোক্তাদের কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্যোবিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১০১ কোটি ২৮ লাখ ডলারের। এই আয় এর আগের অর্থবছরের চেয় ৪১.৫৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ২.৬০ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তাঁরা বলেন, ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরো বাড়ানো সম্ভব।
এজন্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত মান পরিপালনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, তবে ভারতের বাজারে অনেক সময় অযৌক্তিকভাবে অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয়। এই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে ক‚টনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের দর-কষাকষির দক্ষতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে ক¤িপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এই চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি আরো বাড়বে। একই সঙ্গে দেশে ভারতের বিনিয়োগও বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ভারতের বাজার সম্ভাবনাময়। দেশটিতে রপ্তানি আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়।
গত দুই বছর ধরে অসাধারণ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশটিতে। সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেও ভালো রপ্তানি আয় হয়েছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তির ফলে বৈশ্বিক বাজারের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া আমাদের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, উদ্ভাবন ও উৎপাদন সক্ষমতায় ভারতের বাজারে কদর বাড়ছে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাত বছরের ব্যবধানে দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮৬.৭১ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় ৪৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় ৪২ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় ৪২ কোটি ১৮ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১০১ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
ভারতের বাজারে যেসব পোশাকের চাহিদা বেশি এগুলো হলো-কটন ওভেন ট্রাউজার, বিদায়ি অর্থবছরে এটা থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ ডলার; কটন ওভেন শার্ট থেকে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার; কটন ওভেন ট্রাউজার (ডাবিøউজি) থেকে আয় ৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; কটন নিটেড টি- শার্ট থেকে আয় ৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলার; ওভেন ব্রা থেকে আয় ৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার; নিট কটন শার্ট থেকে আয় ৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার; ওভেন নন কটন ট্রাউজার থেকে আয় ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার; নিট নন-কটন টি-শার্ট থেকে আয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার; এমএমএফ নিট সোয়েটার থেকে আয় ৩ কোটি ডলার এবং সিনথেটিক ওভেন জ্যাকেট থেকে আয় হয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। জানা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয় ভারত।