ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে কারণে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে কারণে পিছিয়ে বাংলাদেশ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বৈশ্বিক নেট দুনিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশের রোবাইয়াতের মতো অনেক তরুণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। গড়েছেন গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল সম্পদ। রোবাইয়াত দোলন একজন ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার। লেখাপড়া করেছেন ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে যে কাজেই যুক্ত হতে যাই, দেখি বেতন ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পরে চিন্তা-ভাবনা করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি।’
ফ্রিল্যান্সিং করা বিজ্ঞজনেরা বলছেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে দক্ষ নন। অর্থাৎ বৈশ্বিক মার্কেট প্লেসে যোগাযোগের জন্য যে ধরনের ইংরেজি, আইটি বিষয়ে দক্ষতা দরকার, তা আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের নেই। ফলে তারা অধিক দক্ষতাসম্পন্ন কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। আর এ কারণেই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা তুলনামূলক অনেক কম উপার্জন করছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে কী পরিমাণ মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারি হিসাবে দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ বলে দাবি করা হয়। বলা হয়ে থাকে, এ খাতে আয়ের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আয়ের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতে দক্ষ জনবলের সংকট রয়েছে। এ খাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারা বলছেন, ২০০০ সাল থেকে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং শুরু হয়। বৈশ্বিক ব্যবসায় করার জন্য যে ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিস বা যে ধরনের স্পিড দরকার, তা আমাদের দেশে নেই। যদিও গত ১০ বছরে এই সার্ভিস অনেকটা উন্নত হয়েছে। এ কাজের পারিশ্রমিক বা অর্থ বিদেশ থেকে আনার জন্য ভালো পথ নেই। পেপল সিস্টেম বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। যারা কাজ করেন, তারা বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করে তাদের কাজের পারিশ্রমিক দেশে আনেন। এই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং আরো উন্নত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা বিজ্ঞজনেরা।
দেশের ফ্রিল্যান্স খাত নিয়ে সম্প্রতি ‘আইটি ফ্রিল্যান্সিং ইন বাংলাদেশ : অ্যাসেসমেন্ট অব প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার নিডস’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটিতে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা সংকটের পাশাপাশি বৈশ্বিক মানদণ্ডে দেশীয়দের আয়বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খাতে বৈশ্বিক মানদণ্ডে একজন পুরুষ ও নারীর ঘণ্টাপ্রতি গড় পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ১ ও ৩০ মার্কিন ডলার। বিপরীতে এ খাতে বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী গড়ে পান ১৪ ও ১০ ডলার। ডিজাইন খাতে একজন পুরুষ ও নারীর গড় পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ১ ও ৬১ দশমিক ১ ডলার; বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী গড়ে পান ২০ ও ৭ ডলার। বিজনেস সার্ভিস খাতে পুরুষ ও নারীর গড় পারিশ্রমিক ৩৮ ও ৬২ দশমিক ৩ ডলার; বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ও নারীর গড় পারিশ্রমিক ২৩ ও ১৯ ডলার।
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) সভাপতি তানজিবা রহমান মনে করেন, দেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারের আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লেসে কাজ করার আগ্রহ খুবই কম। এ জন্যই তারা নিজেদের দক্ষভাবে গড়ে তুলতে পারছেন না। উচ্চ পারিশ্রমিকের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত নিম্ন পারিশ্রমিকের কাজ বেশি হয়। গেম ডেভেলপিং, বায়োমেডিক্যাল কনটেন্ট রাইটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের মতো উচ্চ পারিশ্রমিকের কাজ খুব কম হয়। একটা সময় ছিল, এসব বিষয়ে লক্ষ্য করার মতো কোনো গ্রুপ ছিল না। এখন সে কাজটা বিএফডিএস করছে।’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *