বিশেষ সংবাদদাতা: ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’, মোর্শেদ কেবলাজানের প্রায় ৩৩ বছরের প্রচেষ্টার ফসল। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ একটি মহামূল্যবান কিতাব যা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পৃষ্ঠার কাছাকাছি। যে কিতাব ৮ খন্ডে বিন্যাস করা হয়েছে। এই কিতাবে আল্লাহর একত্ববাদের পরিচয়, আল্লাহর অস্তিত্বের পরিচয় এবং সিফাত বা গুণের পরিচয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই তাফসির প্রণেতার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর আকার অথবা আল্লাহর অস্তিত্বকে জাতির কাছে তুলে ধরা। তিনি প্রথম খন্ডে আল্লাহ তায়ালার জাত পাকের গুণ তুলে ধরেছেন অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে যেখানে আল্লাহ্ তায়ালার চোখ মোবারকের কথা বলা হয়েছে, যেখানে তাঁর হাত মোবারকের কথা বলা হয়েছে, যেখানে তাঁর কদম মোবারকের কথা বলা হয়েছে, সেই বিষয়গুলোকে তিনি প্রথম খন্ডে একত্রিত করে আল্লাহর সুরত নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন এবং পরবর্তী ৭ খন্ডে তিনি আল্লাহর সিফাত অর্থাৎ গুণবাচক নাম মোবারকের উপরে আল্লাহর সেই গুণের মহিমা, গুণের মাধুর্যের উপরে পর্যালোচনা করেছেন। এই সর্বমোট ৮ খন্ডের তাফসীর।
মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর গত ২২ ডিসেম্বর, শুক্রবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে হাজার হাজার আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আসলে প্রথমদিকে আমি তাফসীরের সাথে পূর্ণ জড়িত ছিলাম না, আংশিক বিভিন্ন কাজে বাবাজান ডেকেছেন বা আংশিকভাবে তাফসীরের সেই কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলাম। ৬ষ্ঠ খন্ড তাফসীর থেকে পরিপূর্ণভবে আমি তাফসীরের সাথে জড়িত হই। এর পিছনে একটি ঘটনা আছে। আসলে দেখুন, মোর্শেদের জীবন বৃত্তান্ত বলা একটু কঠিন। মোর্শেদের জীবদ্দশায় বলা সহজ কারণ সেটি প্রমাণ করা যায়। ওফাত পরবর্তীতে বলা কঠিন এই কারণে অনেকেই এখন এটি অস্বীকার করবে। কারণ জানেন, জাহিরাতে মোর্শেদ তো আর ধরবেন না। যেই কারণে অনেকে হয়তো অস্বীকার করবেন। একদা আমি মোর্শেদ কেবলাজানের হুজরা শরীফে যাই, বিভিন্ন সময়ের মতোই যাই। দেখলাম, একদিন ওনার মন মোবারক খুব খারাপ। বেশ খারাপ! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? কেন আপনি এরকম মন মরা? আমার ভয় হয়,আমি কি তাফসীর শেষ করে যেতে পারবো কি-না? তাফসীর অলরেডি তখন ৫ম খন্ড বের হয়ে গিয়েছে। আর তো বেশি সময় লাগার কথা না! তখন সিদ্ধান্ত ছিলো ৯ম খন্ড পর্যন্ত তাফসীর বের হবে। আমার মনে হয় আমি শেষ করে যেতে পারবো না। আমি মোর্শেদ কেবলাজানকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার এইরকম বা এইরূপ চিন্তা কেনো মনে হয় যে, আপনি তাফসীর শেষ করে যেতে পারবেন না? তখন তিনি আমাকে জানালেন যে, আমাদের আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্রের যেসকল আলেম ভাইয়েরা ছিলেন, ওনাদের কাছ থেকে মোর্শেদ কেবলাজান একটি প্রজেকশন চেয়েছেন যে, পুরো তাফসীর কমপ্লিট করতে আমাদের কিরকম সময় লাগতে পারে? বাবাজান তখন আমাকে বললেন যে, ওরা আমার কাছ থেকে ৩ বছর সময় চেয়েছে। খুব অসন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন যে, আরও ৩ বছর তারা আমাকে একটি প্রজেকশন দিচ্ছে। আমার মনে হয় না আমি তাফসীর শেষ করে যেতে পারবো। দেখুন, আমি তো ওনাকে দিল ও জানসে ভালোবাসি। আপনারা জানেন, মোর্শেদের মন খারাপ থাকলে তার মুরিদ হিসেবে (আমি সন্তান হিসেবে নিজেকে কখনো জাস্টিফাই করিনি, আমি মুরিদ হিসেবেই জাস্টিফাই করেছি) মোর্শেদকে খুশি করা যায় কিভাবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম, মালিক আপনি দয়া করুন, আমি কি তাফসীর আগে বের করে দিবো? তুমি পারবে? আমি পারবো কি-না জানি না তবে আপনি যদি দয়া করেন আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। আপনি আমাকে গবেষণা টেবিলের দায়িত্ব দিয়ে দিন, আমি চালাবো। আমিই করবো। আমি কিভাবে কাজ করি, আমার কাজের পদ্ধতিতে কেউ ইন্টারফেয়ার করতে পারবে না। মানে আমি যেই পদ্ধতিতে কাজ করবো সেই পদ্ধতিতে কেউ না বলতে পারবে না এবং ইন্টারফেয়ার করতে পারবে না। হাসি দিয়ে বললেন, ঠিক আছে যাও। তুমি দায়িত্ব নিয়ে নাও টেবিলের। আমি গিয়ে টেবিলের দায়িত্ব নিলাম। আমার মনে আছে প্রথমে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন লেগেছে টেবিলের কাজের ফ্লো এবং প্রসেস বুঝতে। ওলামা ভাইয়েরা, যারা আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্রে তখন ছিলেন সবাইকে নিয়ে বসলাম। পুরো টেবিলে কিভাবে কাজ চলে আগে নিজে তো জানতে হবে? না জেনে তো কোনো কাজ করতে পারবো না। আমি ২০ থেকে ২৫ দিন সময় নিলাম। সময় নিয়ে কিভাবে কারেকশন হয়, কিভাবে প্রুফিং করে। তারপরে ওনারা ফাইনাল ৩টি কারেকশন করেন কিভাবে কাজ হয় টোটাল প্রসেস আমি ২০-২৫ দিন ধরে কয়েক ঘন্টা করে সময় দিলাম এবং পুরো কাজের প্রসেস আমি মাথায় নিলাম যে, তাফসীরের কাজ কীভাবে হয়? যেহেতু মোর্শেদের গোলামীর কাজ। আমি একটি ডিফরেন্ট সিস্টেম দিলাম যে, আজ থেকে এইভাবে কাজ হবে।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, মালিক দয়া করলেন এবং আমরা পরবর্তীতে মোর্শেদের অপার দয়ার বদৌলতে এই ৩ বছরের প্রেডিকশনকে আমরা ১ বছরে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ আমরা শেষ করতে পারি এবং ৯ খন্ডের জায়গায় ৮ খন্ডে তাফসীর সমাপ্ত হয়। এটিও আমার সিদ্ধান্ত। এগুলো ঐতিহাসিক বিষয়। আজাদ ভাই যখন বাবাজানের কাছে কমপ্লিট ৮ খন্ডের তাফসীর নিয়ে আসলেন, বাবাজানের হাত মোবারকে দিলাম স্যাম্পল কপি। তখনও উদ্বোধন হয়নি। মোর্শেদ কেবলাজান খুব খুশি হলেন এবং আমাকে বললেন যে, এটা তোমার দ্বারাই সম্ভব। নয়তো এই কাজ কেউ করতে পারতো না। আমি তো মনে করেছিলাম, আমি তাফসীর দেখে যেতে পারবো না। তোমার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। আরেকটু বলেছিলেন। মালিক খুশি হলেই আমাকে বলতেন, সাবাস। বলেছিলেন যে, সাবাস! এটা তোমার দ্বারাই সম্ভব। আজও সেই স্মৃতিগুলো আমার মনে আছে। ঘন্টার পর ঘন্টা আলেম ভাইদের সাথে তাফসীরের টেবিলে সময় অতিবাহিত করেছি। মোর্শেদের হুকুমের কারণে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজগুলো ত্বরান্বিত করে চেষ্টা করেছি যে, তাফসীরকে আপনাদের কাছে তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য, মোর্শেদের ইচ্ছায়। শুধু মোর্শেদের মনের কষ্ট দূর করার জন্য মূলত আমি কাজ করেছি যে, ওনার এই আফসোসকে যাতে আমি লাঘব করতে পারি। সেজন্য আমি চেষ্টা করেছি যে, আমার জাগতিক জ্ঞান বা বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে এই তাফসীরের কাজকে একটু ত্বরান্বিত করতে এবং মোর্শেদের ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে। মালিক দয়া করে আমাকে তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর এই কিতাবে গোলামি করার সুযোগ দিয়েছেন এবং আমি মোর্শেদের কদমে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি যে, তিনি আমার উপরে আস্থা রেখেছিলেন। এর সবচেয়ে বড় বিষয় যে, উনি ৫ খন্ড তাফসীর এক স্টাইলে বের করছেন। এক ট্র্যাকে, এক ফর্মেটে। আমি এসে ভেঙ্গে দিয়েছি সব। ভেঙে দিয়ে পুরো নতুন স্টাইল টেবিলে চালু করছি। ফুল প্রসেস রিভার্স করে ফেলছি। ওনার ৩৩ বছরের ফসল উনি আস্থা রাখছেন আমার উপর। এটি কিন্তু অনেক বড় একটি বিষয়। বাবাজান আমার উপরে আস্থা রাখেছেন এবং আমার হাত দিয়ে কাজ শেষ করিয়েছেন। এজন্য আসলেই আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে, উনি এই গোলামের প্রতি ঐ সময়ে আস্থা রেখেছেন। তবে মালিক দয়া করে সুযোগ দিয়েছেন তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী-তে গোলামী করতে পেরেছি এবং ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ একটি এমন মৌলিক গ্রন্থ, যেটিতে মূলত এই গ্রন্থের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব এবং আকারকে প্রমাণ করা। মানে এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব এবং তাঁর আকারকে জগতের কাছে প্রমাণ করা এবং প্রথম খন্ডে অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কুরআনে তাঁর বর্ণনার উপরে। ‘খালাকাল্লাহু আদামা আলা সুরাতিহি’; আদমকে যে আল্লাহ তাঁর নিজের সুরতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সুরতে আদম তৈরি অতএব আদমের সুরতের বৈশিষ্ট্যগুলোই আল্লাহর মাঝে পাওয়া যাবে। ঠিক এই ট্র্যাক ঠিক রেখেই কুরআন ও হাদিসে কোথায় কি আছে তা বিস্তারিত খুঁজে বের করে সেটার উপরে তাফসীর করে, বর্ণনামূলক আলোচনা করে প্রথম খন্ড এবং পরবর্তী খণ্ড গুলোতে আল্লাহর গুণবাচক নামের, তাঁর গুণের মহিমা এবং গুণবাচক নামের গুণে, আল্লাহ কখন কোন মহিমা করেন এবং একজন নিরাকার আল্লাহ আকারের উপরে তো মহিমা করতে পারেন না। নিরাকার ব্যক্তি কি আকারকে মহিমা করতে পারেন?
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, মোর্শেদ কেবলাজান এই সিফাতগুলো একত্রিত করে দ্বিতীয় বার প্রমাণ করেছেন যে আল্লাহ্ তা’য়ালার আকার আছে, তিনি নিরাকার নন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, “আমি আল্লাহ্কে দেখেছি এবং আপনারা যদি কেউ আল্লাহ্কে দেখতে চান, আমার কাছে আসুন, আমার কাছে গোলামী করুন। আমি যদি আপনাকে আল্লাহ্কে দেখাতে না পারি তাহলে দেশ ছেড়ে চলে যাব। আরও শক্ত কথা বলেছেন যে, পুত্র যেমনভাবে তার পিতাকে চিনে ঠিক তেমনিভাবে আমি আমার মালিককে চিনি। আমি আমার মালিককে দেখেছি, আমি মালিককে চিনেছি এবং আমি আপনাকেও মালিকের সন্ধান দিতে পারি।” এই কথাগুলো আজকে অনেক সহজ মনে হয়। একটি সময়ে এই কথাগুলো এতো সহজ ছিল না। আজ আলেম-ওলামাগণ তাদের আলোচনায় আল্লাহর আকার নিয়ে আলোচনা করেন। অনেক আলেম-ওলামা সুন্নী বলেন, ওহাবী বলেন এখন আল্লাহ্ আকার বা অস্তিত্ব স্বীকার করেন। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে, বেশিরভাগ মানুষই আল্লাহর আকার বা অস্তিতের কথা স্বীকার করেননি। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, আমাদের মোর্শেদ কেবলাজানের মোর্শেদ ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) তিনি নিজেই আল্লাহর আকারের ব্যাপারে বলেছেন, “আল্লাহ আকার এটিও ঠিক, আল্লাহ নিরাকার এটিও ঠিক।” তিনি উদাহরণ দিতে গিয়ে পুটি মাছের কথা বলেছেন। পুঁটি মাছ যখন নদীতে থাকে সাঁতরে সাঁতরে নদীর সীমানাতে যায়। যে কারণে পুঁটি মাছের কাছে নদীর আকার আছে। কিন্তু ঐ পুঁটি মাছকে যখন তুমি সমুদ্রে ছেড়ে দিবে সে তখন সমুদ্রের আয়তন খুঁজে বের করতে পারবে না। এজন্য তার কাছে সেটি নিরাকার মনে হয়। তাহলে মানে চন্দ্রপুরীও আকারের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি কিভাবে আকারের কথা স্বীকার করেছেন? খুবই সিম্পলভাবে। যিনি দেখেছেন তার কাছে আকার, যিনি দেখেননি তার কাছে নিরাকার। মানে এইভাবে উত্তর দিছেন আর কি। আবার বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী, বাহাউদ্দীন নকশবন্দি অনেক অলী-আল্লাহ্ই আল্লাহ্কে দেখেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, আমি ১শ বার আল্লাহ্কে দেখেছি। কেউ বলেছেন, আমি ৯৯ বার দেখেছি। কেউ বলেছেন, আমি ২০ বার দেখেছি কিন্তু আল্লাহ্ নিরাকার। আচ্ছা নিরাকার বস্তুকে কি দেখা যায় বলুন তো? বাতাসের আকার নেই। বাতাসকে দেখতে পারবেন? বাতাস দেখা যায়? নিরাকার বস্তুকে তো দেখা যাবে না। এখন বাস্তবিক অর্থে, মানে বহু অলী-আল্লাহই অদৃশ্যের কথা বলেছেন যে আল্লাহ্কে দেখেছেন, কিন্তু তারা তাঁর অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না। তাই তখন আমার মোর্শেদ কেবলাজান এই সমাজের এই ভ্রান্ত ধারণাকে দূর করার লক্ষ্যে তিনি নিজে আল্লাহ্কে দেখেছেন এবং অনুভব করেছেন যে মানুষ আল্লাহ্কে দেখবে এবং আল্লাহ্ তা’য়ালাও পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে আল্লাহর দর্শনের ব্যাপারে খুব শক্ত শক্ত কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেছেন, “তুমি যদি আমার সাক্ষাৎ কামনা না করো আমি তোমাকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করবো।” আল্লাহ্ও বলেন তোমাকে আমার সাক্ষাৎ কামনা করতে হবে। আর আমি বলি যে তোমার তো অস্তিত্বই নাই। তো অস্তিত্ব বিহীন সাক্ষাৎ কামনা করা সম্ভব? আকার নেই, রূপ নেই! তখন মোর্শেদ কেবলাজান ঐ সমাজের মানুষের এই ভ্রান্ত ধারণাকে দূর করার লক্ষ্যে আল্লাহর আকারের উপরে আলোচনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি যখন আল্লাহর আকারের উপরে কথা বললেন, পরবর্তীতে বাংলাদেশের সবগুলো বড় বড় পত্রিকাগুলো বাবাজানকে নিয়ে নিউজ করে যে, দেওয়ানবাগীর চ্যালেঞ্জ “আল্লাহ্কে দেখাতে না পারলে দেওয়ানবাগী দেশ ছেড়ে চলে যাবে।” আমার সেদিনগুলোর কথা এখনো মনে আছে এবং মোর্শেদ কেবলাজান আল্লাহ্কে দেখেছেন এই কারণে ওনার বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয় এবং বাবাজানের পক্ষে উকিল হিসাবে মামলা লড়েন, আপনারা সবাই চিনেন অ্যাডভোকেট প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান মিয়া। উনিই বাবাজানের পক্ষে মামলা লড়েন এবং সেই মামলায় জয়যুক্ত হন এবং দুনিয়ায় বসে আল্লাহ্কে দেখা সম্ভব এই মর্মে বাবাজান মামলায় জয়যুক্ত হন। চিন্তা করা যায় আল্লাহ্কে দেখার অপরাধে মামলা হতে পারে? তাও বাংলাদেশে! এখন আপনাদের কাছে অবাক লাগলেও আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর নামে কিন্তু এই নিয়ে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) জয়যুক্ত হয়েছেন। এভাবে নানাবিধ ঘটনা এবং আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) পরবর্তীতে চিন্তা করলেন যে, আল্লাহর আকার নিয়ে যেহেতু এতই সমস্যা তাহলে আমি একটি কুরআনের তাফসীর লিখবো। পুরো তাফসীরের মূল দর্শন হবে আল্লাহর আকারের। আমি এমনভাবে কুরআন ও হাদিস দ্বারা আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহর আকার নিয়ে লিখবো, যাতে দুনিয়াতে কেউ আর কোনোদিন আল্লাহ্কে নিরাকার বলার সুযোগ না পায়। যদি কেউ নিরাকার বলে আমার মুরিদ আমার আশেকদের কাছে এতো বড় তাফসীর গ্রন্থ দিয়ে যাবো একটি দলিল দিলে তারা হাজার হাজার দলিল দিবে আল্লাহর আকারের উপর। দেখি আল্লাহ্কে আর মানুষ কিভাবে নিরাকার বলে। এই উদ্দেশ্যেই তিনি এই ১১ হাজার পৃষ্ঠার তাফসীর রচনা করেন। যাতে আমরা এই তাফসীর গ্রন্থ পঠনের মাধ্যমে নিজেদের আলোকিত করতে পারি এবং আল্লাহর আকারের বা ‘আল্লাহ নিরাকার নন, তাঁর আকার আছে’ এই বিষয়ে আমরা সমাজের মানুষকে আলোকিত করতে পারি। শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) তাঁর তরিকত জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় এই তাফসীরের পেছনে ব্যয় করেছেন। সপ্তাহে ৭ দিন কম করে ৩-৪ ঘন্টা করে টানা সময় দিয়েছেন এই তাফসীরে। উদ্দেশ্য সমাজে যাতে আল্লাহর আকারকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমাদের প্রত্যেক আশেকে রাসূলের উচিত আমরা তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী পাঠ করা এবং সেটি থেকে নিজেদের আলোকিত করার একটি সুযোগ কাজে লাগাই। মোর্শেদের এই পরিশ্রম, আমাদের জীবনে আসলে তখনই সাকসেস হবে, যদি আমরা আসলে এটি পড়ি এবং এর জ্ঞান নিজের মাঝে ধারণ করতে পারি। শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর এই তাফসীর অত্যন্ত মূল্যবান একটি গ্রন্থ এবং এই গ্রন্থতে যেহেতু আমি নিজেও গোলামি করার সুযোগ পেয়েছি, তাই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এবং আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে যে, যেহেতু অনেক বড় গ্রন্থ চাইলে তো একটানা পড়ে শেষ করতে পারবেন না। এই তাফসীর গ্রন্থ যারা এখনো পড়েননি তারা পড়ে নিজেকে আলোকিত করার চেষ্টা করবেন। আর শাহ্ দেওয়ানবাগীর আল্লাহ্কে আকারের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে। আমরা আশেকে রাসূলেরা যতদিন বেঁচে আছি, যতদিন বেঁচে থাকবো। আমরা আমাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহারে আল্লাহর অস্তিত্বকে সমাজের মাঝে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবো এবং আল্লাহর অস্তিত্বকে বিশেষ করে আমাদের ক্বালবে টিকিয়ে রাখবো। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।
পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।