পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়

পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়

আবরার আবদুল্লাহ: আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়, পাঠদানে পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে অবস্থিত প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছিল ৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দে (১২০ হিজরি)। পাঠদানের বিবেচনায় পৃথিবীর চলমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আল-জাইতুনাই সর্বপ্রাচীন। এর পরই রয়েছে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় (৮৫৯ খ্রি.) ও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের (৯৭২ খ্রি.) অবস্থান।
আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা হয়েছিল আল-জাইতুনা মসজিদের আঙিনায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর পাঠদান কার্যক্রম সীমিত ও অগোছাল থাকলেও ক্রমেই তা উত্তর আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় এবং অত্র অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতি বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও উত্তর আফ্রিকার প্রথম সুপরিকল্পিত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিধি মতে গড়ে ওঠা বিদ্যাপীঠ হলো কারাউইন। আর এটাই ছিল উত্তর আফ্রিকার প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র।
খ্রিষ্টীয় ১৩ শতকে আলমুহাদ ও হাফসিদ শাসনামলে তিউনিস আফ্রিকানের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের ফলে আল-জাইতুনা উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্রে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায়। ধীরে ধীরে প্রসারিত হয় এর পাঠদান কার্যক্রমও। পবিত্র কুরআন, হাদিস, ধর্মতত্তে¡র পাশাপাশি এখানে আইন, ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রের পাঠদান করা হতো।
মুসলিম সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) ছিলেন আল-জাইতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ কার্যক্রম ছিল ‘কুত্তাব’। এ বিভাগে যুবকদের বই পড়া, লেখালেখি ও মুখস্থকরণের পদ্ধতি শেখানো হতো। আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিষয় নির্বাচনে স্বাধীন ছিল এবং বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের পর অন্য বিষয় অধ্যয়নের সুযোগ পেত। নির্বাচিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হতো এবং তাদের ইজাজাহ বা সনদপত্র প্রদান করা হতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। যেখানে ভাষা-সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত¡, যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, খনিজবিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বিষয়ের বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ ছিল। ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে স্পেন তিউনিসিয়া দখলের আগ পর্যন্ত তা অত্র অঞ্চলের অন্যতম প্রধান পাঠাগার ছিল। স্প্যানিশরা তিউনিসিয়া দখলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার ও আল-জাইতুনা মসজিদ ধ্বংস করেছিল।
১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে আহমদ বে আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও পাঠক্রমের সংস্কার শুরু করেন। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী খায়ের আল-দ্বিনের নেতৃত্বে তা আরো বেগবান হয়। তিনি আল-আবদালিয়া পাঠাগারের সম্প্রসারণ করেন এবং তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে রসায়ন, রাজনৈতিক অর্থনীতি ও ফ্রেন্স ভাষা যুক্ত হয় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফরাসি উপনিবেশের বিরুদ্ধে আল-জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ‘দসতুর পার্টি’ গড়ে তোলে। তিউনিসিয়ার স্বাধীনতার পর ২৬ এপ্রিল ১৯৫৬ আধুনিক জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অব তিউনিস প্রতিষ্ঠার পর জাইতুনা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্ব হারায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটি জাতীয় পাঠাগারের অধিভুক্ত করা হয়। ১ মার্চ ১৯৬১ বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘ফ্যাকাল্টি অব শারিয়াহ অ্যান্ড থিয়োলজি’ খোলে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ফ্যাকাল্টিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনটি ইসলামিক ইনস্টিটিউট ও একটি ইসলামি কেন্দ্র রয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *