চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: দেশে পানিতে ডুবে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ১৫ হাজার শিশু। এ জাতীয় দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশই বসতবাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে পুকুর কিংবা জলাশয়ে ডুবে। সংশ্লিষ্টরা এর নেপথ্যে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। সেই সঙ্গে এ জাতীয় মৃত্যু কমাতে ১৪ সুপারিশ করা হয়েছে। তথ্যমতে, দেশে পানিতে ডুবে ও নিউমোনিয়ায় শিশুর মৃত্যুর হার সমান।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য এবং তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, প্রতি বছর (১ থেকে ১৭ বছর বয়সী) ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু মৃত্যুবরণ করে পানিতে ডুবে। পুকুর, ডোবা, খাল, বালতি এবং বাকেটসহ বিভিন্ন জায়গায় ডুবে এসব শিশুর মৃত্যু হয়। একাধিক শিশু বিশেষ করে যমজ শিশু একই স্থানে একই সঙ্গে পানিতে ডুবে মারা যেতে দেখা যায়। সাধারণত পানিতে পড়ে গেলে একটি শিশু অন্য শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একসঙ্গে মারা যায়। সূত্র জানায়, দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অপুষ্টি এবং কলেরায় মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করে ‘ডিজাস্টার অ্যাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (দাদু)। এ সংগঠনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড মো. ইদ্রিস আলম বলেন, প্রতি বছর দেশে পানিতে ডুবে যে পরিমাণ শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৮০ শতাংশই বসতবাড়ি থেকে ২০ মিটার দূরত্বের মধ্যে পুকুর-জলাশয়ে ডুবে। দাদু এভাবে শিশুমৃত্যুর ছয়টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- বয়স্কদের তত্ত¡াবধানের অভাব, গ্রামে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের অভাব, অতি দরিদ্র, পুকুর-জলাধারে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব এবং সাঁতার না জানা। এই মৃত্যুর হার কমাতে ১৪টি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। এর মধ্যে রয়েছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করা, বাড়িতে শিশু পানি থেকে নিরাপদ কি না পর্যবেক্ষণ করা। এর ভয়াবহতা পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে আলাপ করা। বন্ধুদের আড্ডায় অন্য বিষয়ের সঙ্গে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা। প্রতিবেশীদের বাচ্চারা নিরাপদ কি না পর্যবেক্ষণ করা, উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা করা, জলাধারের চারপাশে বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং অন্যকেও উৎসাহিত করা। আর্থিক সক্ষমতা থাকলে দরিদ্র পরিবারকে বেষ্টনীযুক্ত খেলাঘরের ব্যবস্থা, শিশুদের সাঁতার শিখানোর ব্যবস্থা, স্বীকৃত প্রশিক্ষকের কাছ থেকে সিপিআর প্রশিক্ষণ, এলাকায় যুবকদের সমন্বয়ে ক্যাম্পেইন, জাতীয় জনসচেতনতা ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া। এলাকায় কমিউনিটি ডে-কেয়ারের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাস্তবায়ন করা।
ড. মো. ইদ্রিস আলম বলেন, ‘দাদু’ পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জনসচেতনতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাঁতার প্রশিক্ষণ, জলাধার থেকে সুরক্ষা কৌশল শিখানো, অনিরাপদ জলাধারে বেষ্টনী এবং কমিউনিটি ডে-কেয়ার স্থাপনে কাজ করছে। অর্থ সংকট, বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাব এবং অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণে ডব্লিউএইচওর দেওয়া কৌশল দেশব্যাপী বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিবারণে ভূমিকা রাখা যেতে পারে।