নেপালিদের ঘরে ঘরে স্বপ্ন বাংলাদেশি ডাক্তার হওয়ার

নেপালিদের ঘরে ঘরে স্বপ্ন বাংলাদেশি ডাক্তার হওয়ার

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: হিমালয়কন্যা নেপালের মানুষের কাছে বাংলাদেশ এক আকর্ষণীয় বিদেশ। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নেপালি অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি হাজার হাজার নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি নেপালি শিক্ষার্থী। নেপালিদের ঘরে ঘরে বাংলাদেশি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। নেপালে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক উঁচু ধারণা পোষণ করেন অভিভাবকরা। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যাদের কাছ থেকে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যাচ্ছে নেপাল থেকে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশ ভারত, ভুটান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকায় পড়তে যাচ্ছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪২৭ জন এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১৭৩৭ জন এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১৯৭০ জন ভর্তি হন। এ সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। কারণ, বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, ২০১১ সালে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২৫ শতাংশ ছিল। পর্যায়ক্রমে এই হার বাড়ছে। গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল কলেজগুলোয় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে। এমনকি মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএসে পাঁচটি এবং বিডিএসে (ডেন্টাল) দুটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়তে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নেপালি। হিমালয়ের দেশের শিক্ষার্থীরা মূলত বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতেই পড়তে যান। সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তাসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশকেই বেশি পছন্দ নেপালিদের। টঙ্গীর গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন রওশান গুপ্তা। এখন কাঠমান্ডুতে নিজেই চেম্বার দিয়েছেন। বছর পাঁচেক আগে পাস করা এই চিকিৎসক বাংলাদেশে নেপালিদের মেডিকেলে পড়তে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার মান অনেক ভালো। সেখানে পড়ার খরচও তুলনামূলকভাবে কম। ভারতে পড়তে গেলে আমাদের কোটি রুপির ওপরে খরচ পড়ে যায়। এজন্য অধিকাংশ নেপালি বাংলাদেশের দিকেই ঝোঁকে।
ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নেপালি মুসলিম আয়েশা সোহেলী বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশ আমাদের খুবই প্রিয়। মেডিকেল শিক্ষায় বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে খরচ কম এবং মান ভালো। সেখান থেকে পাস করে আমাদের মেডিকেল কাউন্সিলে বাংলাদেশের সার্টিফিকেট দেখালে ভালো মূল্যায়ন পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে আসার পর একটা লাইসেন্স পরীক্ষা দিতে হয়, তাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আসাদের রেজাল্ট অনেক ভালো হয়। তিনি বলেন, নেপালের কয়েকটি এলাকা আছে যেখান থেকে প্রতি ঘরে ঘরে বাংলাদেশে গিয়ে মেডিকেল পড়ার স্বপ্ন দেখে তরুণরা। আমাদের একজন ডাক্তার ভোলা স্যার আছেন। নেপালে খুবই জনপ্রিয় ডাক্তার। ঢাকা থেকে পাস করে এসেছেন অনেক আগে। তাঁকে দেখেই হাজার হাজার নেপালি স্টুডেন্ট বাংলাদেশে পড়তে যায়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থী ডাক্তার ভোলা রিজাল বাংলাদেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১৯৭২ সালে পাস করে বের হন। বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী নেপালের একমাত্র পুরুষ গাইনোকলজিস্ট ডাক্তার ভোলা একাধারে লেখক, সাহিত্যিক ও শিল্পী। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন অনেক বেশি সংখ্যায় ঢাকায় পড়তে যাচ্ছে। কারণ, ঢাকার মেডিকেল এডুকেশন অনেক ভালো। খরচ কম এবং সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকেও দুই দেশের অনেক মিল রয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *