মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ: এ কথা সত্য যে নারী-পুরুষ সবারই পর্দা রক্ষা ‘দায়েমি ফরজ’ বা সার্বক্ষণিক বাধ্যতামূলক। তবে প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।’
মেয়েদের ইসলামিক স্টাডিজের প্রতি আগ্রহ নিশ্চয়ই ক্ষতিকর নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্বনামধন্য শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে পেয়েছি আল্লামা আজিজুল হক (রহ.), জাতীয় অধ্যাপক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ড. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ড. আ ন ম রইছউদ্দিন, ড. আ র ম আলী হায়দার, মাও. মো. আনসার উদ্দিন, মাও. আ. মালেক প্রমুখ। তাঁরা শিক্ষার্থীকে শিক্ষার্থীই মনে করতেন। পর্দাও উপেক্ষিত হতো না।
মহিলাদের স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সীমিত। সহশিক্ষা প্রসঙ্গে মাওলানা থানবি (রহ.) বলেন, ‘এসব ফিতনা বা অসুবিধার জন্য শিক্ষা দায়ী নয়; বরং শিক্ষাপদ্ধতি অথবা পাঠ্যক্রম কিংবা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাই একমাত্র দায়ী।’
আমি ইসলামিক স্টাডিজে অধ্যাপনার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতায় শুনে গর্বিত, উবঢ়ধৎঃসবহঃ ড়ভ ংঃঁফরবং রং ঃযব ফবঢ়ধৎঃসবহঃ ড়ভ ষধফরবংৃ।
ইসলাম নারীর মর্যাদার নিশ্চয়তা দেয়। পবিত্র কুরআনের একটি সূরার নাম ‘নিসা’ বা নারী। সূরা বাকারা, আলে ইমরান, মায়েদা, আহযাব, নূর ইত্যাদিতে নারীর অধিকার ও মর্যাদার বর্ণনা রয়েছে। বিবি খাদিজা (রা.) ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলমান। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা.)।
প্রিয় নবি (সা.)-এর কাছে সর্বপ্রথম যে ওহি আসে, তার প্রথম কথাই ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়ো। এখানে স্ত্রী-পুরুষ সবাইকে কথাটি বলা হয়েছে। এতেই স্পষ্ট, পুরুষের মতো নারীরও জ্ঞানার্জনের পূর্ণ অধিকার আছে।
হযরত আয়েশা (রা.)-সহ অন্য উচ্চ শিক্ষিতা নারীরা শুধু নারীদের নয়, পুরুষদের শিক্ষয়িত্রীও ছিলেন। সাহাবি, তাবেঈন এবং প্রসিদ্ধ পণ্ডিতরা তাঁদের কাছ থেকে হাদিস, তাফসির ও ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন। আয়েশা (রা.) ২২১০ হাদিস বর্ণনা করেছেন। ৩৭৮ হাদিস উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত। এ ছাড়া উম্মে আতিয়া, আসমা বিনতে আবু বকর, উম্মে হানি ও ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা.) বহুসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন।
নারীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহিত করে প্রিয় নবি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনটি বোনকে লালনপালন করবে এবং তাদের ভদ্রতা, শিষ্টাচার, উত্তম চালচলন ও আচার-ব্যবহার শিক্ষা দিয়ে সাবলম্বী হতে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল (স.), কেউ যদি দুজনের জন্য এরূপ করে? তিনি বললেন, দুজনের জন্য এরূপ করলেও।’ (বুখারি)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নারীরা প্রিয়নবি (সা.)-কে বলল. আপনার কাছে পুরুষরা এত ভিড় লাগিয়ে থাকে যে অনেক সময় আমাদের পক্ষে আপনার কথা শোনা সম্ভবই হয় না। অতএব আমাদের জন্য আপনি আলাদা একটি দিন ধার্য করে দিন। এ কথা শুনে তিনি তাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিলেন।’ (বুখারি)
বস্তুত ইসলাম নারী মুক্তি-স্বাধীনতার রক্ষক। ‘সুরা নুর’ মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং নারীজাতির অহংকার। ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নারীদের সুরা নুর শিক্ষা দাও।’
শরীয়ত অনুমোদিত উপায়ে নারী জাতির উন্নয়ন, শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ ও তৎপরতাকে ইসলাম কল্যাণকর মনে করে। শিক্ষাসহ নারীর সব মৌলিক অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে প্রিয় নবি (সা.) বলেন, ‘তোমরা নারী জাতির বিষয়ে সতর্ক হও। কেননা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ।’ (বুখারি)