নাজুক বিশ্ব অর্থনীতি আবার অনিশ্চয়তায়

নাজুক বিশ্ব অর্থনীতি আবার অনিশ্চয়তায়

বাণিজ্য ডেস্ক: করোনা-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধারে তখন পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই ধাক্কায় বিশ্বে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও রেকর্ড মূল্যস্ফীতির যে চাপ তৈরি হয় তা এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবারও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি আরো তীব্র করবে।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির দিগন্তে কালো মেঘ ছেয়ে গেছে। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি এরই মধ্যে দুর্বল প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এটি জ্বালানি তেলের বাজারকে কতটা প্রভাবিত করে তাও দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী যুদ্ধের কারণে আমরা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছি। এতে অর্থনৈতিক বিভক্তিও শুরু হয়েছে। তেমন প্রেক্ষাপটে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে।’ আইএমএফের হিসাবে এ বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ।


আগামী বছর তা আরো কমে হবে ২.৯ শতাংশ। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ারে-ওলিভিয়ার গোরিনকাস বলেন, ‘আইএমএফের গবেষণায় দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ০.১৫ শতাংশ কমে এবং মূল্যস্ফীতি ০.৪ শতাংশ বাড়ে।’


বিশ্লেষকরা বলছেন, এ যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অঞ্চলে সৌদি আরব, ইরান ও কাতারের মতো শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদক দেশগুলোই শুধু অবস্থান করছে না, সেই সঙ্গে সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথও রয়েছে। ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানির পাশাপাশি বিশ্ববাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে।
থ্রি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারিম বাস্তা বলেন, ‘এ যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঝুঁকি ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’


সিএনএন বিজনেসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে বিশ্ব অর্থনীতি ভয়ানক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিশ্ব প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। তার মধ্যে নতুন করে এ যুদ্ধের প্রভাব শুধু আঞ্চলিক অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর আন্ত সংযোগে যে ফাটল তৈরি হয়েছে তা আরো বাড়াবে।


গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা চালায় হামাস। এরপরের দিনই এক লাফে তেলের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে গাজায় ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ শুরু হলে এবং স্থল অভিযানের ঘোষণা দিলে গত শুক্রবার তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বাড়ে।
বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাবি¬উটিআই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৭.৬৯ ডলার। এর পাশাপাশি লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল হয় ৯০.৭৬ ডলার। গতকাল তেলের দাম বাড়েনি, বরং সামান্য কমেছে। এএনজেড ব্যাংকের বিশ্লেষকরা এক নোটে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়লে তেলের দাম আরো বাড়বে।’


মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এ সংকটে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, তেলের দাম বাড়লে রাশিয়ার সুবিধা, তারা সেখান থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *