জ্বালানি তেলের সংকট দিন দিন বাড়ছেই। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের চাপ পড়েছে আমাদের দেশেও। এই খাতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় খনিজ জ্বালানি উত্তোলনে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে আসছেন। দেশে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অবস্থান জানতে জরিপ, অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এর সুফল মেলেনি। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বর্তমানে দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়েও ভাবা দরকার। বিভিন্ন সময় সচেতন মহল থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এতদিন তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উচ্চমূল্যের কারণে বর্তমানে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিশ্বে ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমছে। জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন একদিকে ব্যয়বহুল তেমনি এর মজুতও সীমিত। বিপরীতে সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হলে খরচ কমার পাশাপাশি তা পরিবেশের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের এই ক্রান্তিকালে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নিঃসৃত কার্বন পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আমাদের সেদিকটিও ভাবা জরুরি। শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ পরিকল্পনায় কাজ হবে না। পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নই সুফল বয়ে আনবে। তবে আশার কথা হলো, ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন করে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। জ্বালানির ঘাটতি পূরণ করতে ২০১০ সালের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি গ্যাসকূপ খননের পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। সরকারের এই মহাপরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, খনন ও উত্তোলন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। পাশাপাশি এ কর্মযজ্ঞে যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয় সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে। খনি থেকে উত্তোলনকৃত তেল-গ্যাস আমাদের প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর সুষ্ঠু তদারকি ও ব্যবস্থাপনা দেশীয় ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে নিঃসন্দেহে। স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি দেশের সামুদ্রিক সীমানায় তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে। বর্তমানে গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ২৬টি ব্লকের মধ্যে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি কাজ করছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে ২০২০ সালে কনকো ফিলিপস, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, এক্সম মোবিলের মতো বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে পেট্রোবাংলা সংশোধিত পিএসসি বা উৎপাদন বণ্টন চুক্তি উপস্থাপন করে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর পছন্দ না হওয়ায় চুক্তি এরপর অগ্রসর হয়নি। কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পেট্রোবাংলার উচিত পিএসসি সংশোধনসহ তা আরো আকর্ষণীয় ও যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা। জ্বালানি সংকট সমাধানের লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকারিভাবে গত ৫ বছরে ৩৪টি নতুন-পুরনো কূপ খননের যে কাজ চলমান রয়েছে তা সামনে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সময়োপযোগী পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হতে হবে।