অর্থনৈতিক ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষের তালিকা বড়ই হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবেই বিশ্বের অন্তত ৭ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে। বাংলাদেশেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। বেড়েছে ধনী-গরিবের বৈষম্য। ইউএনডিপি এ তথ্য জানিয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এতে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম তিন মাসে ৫ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। এছাড়া এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ২ কোটি মানুষের দৈনিক আয় ৩ দশমিক ২০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। এদিকে করোনা মহামারির কারণে গত বছর ১৬ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যায়। এসময় দৈনিক ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করা মানুষের সংখ্যা বাড়ে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। দেশে দেশে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্তহবে দরিদ্ররা। মনে করা হচ্ছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মানুষ দৈনিক আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় করবে খাদ্য চাহিদা মেটাতে। উন্নত দেশগুলোতে এ হার দাঁড়াতে পারে এক-চতুর্থাংশে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের মানুষের বড় অংশ এখন খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। খাবার কেনার জন্য কেউ কেউ পরিবারের কোনো না কোনো সম্পদ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ঋণ করছেন। এদিকে ১৯৯৫ সালকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ বর্ষ ঘোষণা করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পর্যবেক্ষণে দেশে দেশে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা বিশেষ গুরুত্ব পায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ৯০ দশকের উন্নয়নে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা দূরীকরণ প্রাধান্য লাভ করে। এ বিবেচনায় দারিদ্র্য ও বঞ্চনা দূরীকরণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে এক্ষেত্রে কতিপয় এনজিওর উদ্যোগকে ১৯৯২ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অভিনন্দন জানানো হয়। বিশেষ করে ফ্রান্সভিত্তিক এনজিও এটিডি ফোর্থ ওয়ার্ল্ডসহ তাদের অতি দারিদ্র্য দূরীকরণ আন্দোলনের সফলতায় ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালনের কথা পর্যালোচনা করা হয়। এ আলোকে সাধারণ পরিষদ ও উল্লিখিত সভায় ১৭ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস ঘোষণা করে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপ ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সেখানে বলা হয়, মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিগত ছয় মাসে তাদের ওপর বড় আঘাত কী? জবাবে ৮৮ শতাংশ মানুষ খাদ্যের চড়া দামকে বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে ছেন। আরও তিনটি বিষয় বড় আঘাত হিসেবে উঠে এসেছে- রোগ ও চিকিৎসা ব্যয়, তেলের দাম ও পরিবহন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি মনে করছেন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবার। এই বিভাগের ৯৩ শতাংশ পরিবার খাদ্য-মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এছাড়া বরিশালের ৯১ শতাংশ পরিবার ও খুলনার ৮৯ শতাংশ পরিবার এটিকে চাপ মনে করছে।