তাহসিনা সফল হলে হাসবে বিশেষ শিশুরা

তাহসিনা সফল হলে হাসবে বিশেষ শিশুরা

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্রপ্রিয়েট টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহসিনা ফারাহ সানাম। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর নানা জটিলতা নিরসন নিয়ে। এই গবেষণার জন্য পেয়েছেন ইউনেসকো-ওডাবিø¬উএসডি ফেলোশিপ। প্রকল্পটি সফল হলে অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের বাধা দূর হবে। খুব অল্প বয়সে সন্তানের অটিজম শনাক্ত করতে পারবেন অভিভাবকরা।


তাহসিনার জন্ম চট্টগ্রামে, যদিও সেখানে খুব বেশিদিন থাকা হয়নি। বাবা ছিলেন বিচার বিভাগে, অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে অবসর নেন। মা বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার। সেই সুবাদে ১৯৮৬ সালের দিকে তারা ঢাকায় চলে আসে।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে তাহসিনা মেজো। প্রথম শ্রেণি থেকেই ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ে। তার আপু একই স্কুলের ছাত্রী। এখন তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ। ছোট ভাইও ডাক্তার।

ভিত গড়ে দিল বিদ্যালয়
প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে সেরা তিনের মধ্যে থাকত তার নাম। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, বিতর্কসহ স্কুলের প্রায় সব কিছুতেই অংশ নিতেন। শৈশবে নজরুল একাডেমিতে নাচও শিখেছে বছর চারেক। পরে নাচের চর্চা আর করেনি। অবশ্য এখনো ছবি আঁকে, যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আসলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে তৈরি হওয়া সেই আনন্দের জগতে এখনো তার বিচরণ। প্রচুর গান শুনত। অঞ্জন দত্তের গান আর গানের পেছনের গল্প তাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যেত। তাহসিনার পরিবারও ছিল খুব ছিমছাম, পরিপাটি।

বুয়েটে পড়তেই হবে
একসময় ভাবত, নিজের একটি ব্যান্ডদল থাকবে, সেখানে গিটার বাজাবে। আবার স্কুলের স্যারদের দেখে ভাবত, তাঁদের মতো হবে। তবে নবম শ্রেণির আগ পর্যন্ত ডাক্তার হবে, এটিই ছিল পণ। একবার এক বিজ্ঞান মেলায় বুয়েটের এক ভাই এলেন, যিনি অসাধারণ কনসেপ্টে কুইজের প্রশ্ন করতেন। উনাকে দেখেই প্রথম বুয়েট সম্পর্কে জানলাম। তখন মনে হলো বুয়েটে পড়তেই হবে। কলেজে একবার বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সহসম্পাদক হলাম। সেখানকার একটি ফিচারের জন্য বুয়েটে গেলাম ইইই বিভাগের কয়েকজন বড় ভাইয়ের কাছে। তাঁরা তখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের জন্য বুয়েটের শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করছিলেন। সেটি ছিল জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ল্যাবে ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে দেখলাম নিজের চোখে। এভাবে কাজ হয় জানতাম না। এত ভালো লাগল যে মনে হলো বুয়েটে না পড়লে সব বৃথা।

সেই বুয়েটের শিক্ষক
বুয়েটে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগে ভর্তি হলেন ২০০৩ সালে। বুয়েটে পড়তে পড়তেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন। অধ্যবসায় আর হার না মানা মনোবলের কারণে সেই স্বপ্ন মুঠোয় ধরা দিল। ২০১১ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্রপ্রিয়েট টেকনোলজিতে (আইএটি)। মাস্টার্স শেষ হওয়ার পরপরই।
এখন গবেষণাকর্ম নিয়েই মেতে আছেন। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের অ্যাপলিকেশন নিয়ে। আইএটির প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে স্নাতকোত্তর প্রগ্রাম অফার, শিল্পকর্মীদের জন্য সংক্ষিপ্ত কোর্স ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা, প্রযুক্তির চাহিদা এবং নীতিগুলো মোকাবেলায় গবেষণা ও উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। তাদের ইনস্টিটিউট উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা এবং আউটরিচ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই তার গবেষণাও দেশীয় লাগসই প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এখন কাজ করছেন অটিজম শনাক্তকরণ, স্মার্ট টোল ম্যানেজমেন্ট, ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট বিল্ডিং এনার্জি ম্যানেজমেন্ট এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে।


বিষন্ন মুখগুলো দেখে খারাপ লাগে
পিএইচডি করে ফেরার পর গবেষণাকে কিভাবে দেশের কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে ভাবতে থাকলেন। তাহসিনার ছেলে যে স্কুলে পড়ে, সেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদেরও আলাদা শাখা আছে। সেখানে অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা পড়ে। ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় সেসব শিশুকে দেখতেন। তাদের অভিভাবকদের পর্যবেক্ষণ করতেন। সেই মা-বাবাদের চেহারায় যে গভীর বিষণœতা দেখেছেন, সেটি তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তখন অটিজম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। দেখলেন, এখানে তাদের মতো এআই গবেষকদের অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। ধীরে ধীরে তাহসিনার পিএইচডির গবেষণাকে এই খাতে সম্প্রসারণ করার অ্যালগরিদম ডেভেলপ করলেন। এভাবেই শুরু।


স্বপ্নের প্রকল্পে এলো ফেলোশিপ
ইউনেসকো-ওডাবিø¬উএসডি (অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড) ফেলোশিপও পেয়েছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে অটিজম শনাক্তকরণ এবং তাদের যোগাযোগকে সহজতরকরণের গবেষণায়। অটিজম জটিল নিউরোডেভেলপমেন্টাল ব্যাধিগুলোর একটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুরা বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। তারা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (ইশারা ভাষা) ব্যবহার করে। তবে বাংলাদেশে দক্ষ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ অনুবাদক অপ্রতুল এবং এটা বেশ ব্যয়বহুল। এই জটিলতা নিরসনে ওয়াই-ফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শনাক্তকরণে ডিজিটাল সহকারী সাইনকেয়ার তৈরি করা হবে। এ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করা হবে।


প্রকল্পটি সফল হলে অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের বাধা দূর হবে। যা তাদের অনুভূতি প্রকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে দারুণ কাজে দেবে। অভিভাবকরা খুব অল্প বয়সে সন্তানের অটিজম শনাক্ত করতে পারবেন। ফলে সেই শিশুদের সঙ্গে বাংলা ইশারা ভাষায় ভাব বিনিময় করতে পারবেন।


সুনন্দা বৈদ্যকেও অভিনন্দন
এই ফেলোশিপটির মেয়াদ তিন বছর। গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রত্যেক ফেলো সর্বোচ্চ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পাবেন। ফেলোশিপের অর্থায়ন করছে কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি)। উদ্দেশ্য আমাদের দেশের মতো গেøাবাল সাউথের দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের গবেষক ও গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলা। ফেলোশিপের আওতায় নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও যোগাযোগের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। তাহসিনার সঙ্গে এবার বাংলাদেশ থেকে একই ফেলোশিপ পেয়েছেন সুনন্দা বৈদ্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির শিক্ষক। তিনি মাথা-ঘাড়ের টিস্যু ও অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করবেন। বিশেষ করে এই ধরনের ক্যান্সারে টিএলআর ৪ (প্রোটিন)-এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করবেন। সুনন্দা তাঁর কাজের ব্যাপারে ভীষণ প্যাশনেট।

সেই মুহূর্তটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে
ফেলোশিপ নিতে গত ১৪ এপ্রিল ইতালির ট্রিয়েস্টে শহরে গেলেন তাহসিনা। পুরস্কার গ্রহণের জন্য মঞ্চে উঠার মুহূর্তটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এটা কেবল ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বিজ্ঞানে নারীদের জন্য এক সম্মিলিত বিজয়। কারণ, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের একজন তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণার জন্য তাহসিনার যে প্যাশন, তা বাস্তবে রূপ দিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু সংকল্প, অধ্যবসায় আর পরিবারের সমর্থনের ফলে সব চ্যালেঞ্জ উতরে গিয়েছেন। বিশেষ করে মা-বাবা পাশে না থাকলে এতদূর আসা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না।

ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং আইওটির ওপর গবেষণা ল্যাব ও রিসার্চ সেন্টার তৈরি করতে চান। যেখানে শুধু বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নয়, সারা দেশের মেধাবীরা গবেষণার জন্য আসবে, এআইকে মানবকল্যাণে কাজে লাগাবে। এতে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমবে।

কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে
দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বিশ্বের কোনো দেশেই পুরুষের সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না নারীরা। ধনী দেশের নারীরাও সমতা থেকে বঞ্চিত। গত মার্চ মাসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ‘উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল’ শিরোনামের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ১৯০ দেশের মধ্যে ৯৮টি দেশ নারীদের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের আইন করেছে।
২০২৩ সালে বিশ্বের সব দেশ তিনটি ক্যাটাগরিতে সমতা আনতে প্রচেষ্টা চালায়। এগুলো হলো বেতন প্রদান, অভিভাবকের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা। প্রতিটি দেশ দুটি ক্যাটাগরিতে কম স্কোর পায়। এই দুই ক্যাটাগরি হলো শিশু লালনপালন ও নারীর নিরাপত্তা।

নারীর সুরক্ষার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের বিষয়টিও রয়েছে। বিশ্বের ১৫১টি দেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ। তবে মাত্র ৩৯টি দেশ জনসমাগমস্থলে হয়রানি নিষিদ্ধ করেছে। যেসব নারী গণপরিবহন ব্যবহার করে, কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়া করে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে খুব কমসংখ্যক দেশ।
সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মা যেন কাজে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করেছে এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশ। বাকি দেশগুলো শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় মানসম্মত সেবা দেয় না। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে গিয়েও তাদের সন্তানের সুরক্ষার ব্যাপারে চিন্তা করতে হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২২ সালে ‘হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে’ রিপোর্ট প্রকাশ করে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক উঠে আসে এই রিপোর্টে।

জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে বেকারত্বের হার নারীদের মধ্যে ৫.৯ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ২.৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬.৫ শতাংশ, একই বয়সী পুরুষদের চেয়ে যা দ্বিগুণ বেশি। শ্রম বাজারে নারীর হার ৪৩ শতাংশ, পুরুষের ৮১ শতাংশ।


অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সমপরিমাণ কাজ করলেও বেতন কম পায় নারীরা। ঘণ্টায় নারীদের তুলনায় পুরুষরা ৩৫.৪৮ শতাংশ মজুরি বেশি পেয়ে থাকে। কৃষি খাতে এই বৈষম্য আরো প্রকট। এই খাতে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্যের হার ৫৭.২ শতাংশ। বয়সভিত্তিক প্রতিটি শ্রেণিতে পুরুষদের চেয়ে নারীদের আয় কম। নারীর বার্ধক্য আসলে এই বৈষম্য আরো প্রকট হয়। ৬৫ বছর বয়সী বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী নারীরা একই বয়সের পুরুষদের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম আয় করে। লিঙ্গভেদে আয়ের পার্থক্যের প্রধান কারণ পেশাগত বিভাজন। এর ফলে কম বেতন দেওয়া এমন খাত বা চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। নিয়োগের সময় বৈষম্যের কারণেও তারা সুযোগ হারায়। সিদ্ধান্ত বা নীতিমালা তৈরির পর্যায় নারীদের সংখ্যা খুবই কম। ফলে মজুরিবৈষম্য দূর করার নীতিমালা খুব একটা গতি পায় না। এ ছাড়া নারীদের কাছে সম্পদ কম থাকে। এতে ব্যবসা শুরু করতে, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে কিংবা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হয়। ২০২২ সালের হিসাবে ২২.৩ শতাংশ নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এর বিপরীতে ৩৪.৫ শতাংশ

পুরুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে।
নারীদের মধ্যে পূর্ণকালীন চাকরিতে যোগদান করার হার কম। নারীদের (৩৫.৪ শতাংশ) খণ্ডকালীন চাকরি করার হার পুরুষদের (২৮.৭ শতাংশ) তুলনায় বেশি। কৃষি খাতে নারীদের খণ্ডকালীন কাজের হার বেশি। প্রতি ১০ জনে আটজন খণ্ডকালীন কৃষিকাজ করে। পুরুষদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে পাঁচজন খণ্ডকালীন কাজ করে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষরা গড়ে নারীদের চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাঙ্কর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) ফ্যাক্টরিগুলোতে ‘জেন্ডার পে গ্যাপ’ বা লিঙ্গভেদে আয়ের পার্থক্য ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।

আরএমজি খাতে বেশির ভাগ কর্মী নারী হলেও ফ্যাক্টরির ম্যানেজারিয়াল পদে পুরুষরাই থাকেন। যোগ্যতা থাকলেও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পান না নারীরা। এর প্রধান কারণ সংসারের চাপে তারা যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। সময় দিতে না পারার কারণে অনেক সময় পদোন্নতি পেলেও স্বেচ্ছায় সুযোগ ছেড়ে দেন।


বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, জেন্ডার পে গ্যাপ কমিয়ে আনলে সামষ্টিক অর্থনৈতির উন্নতি ঘটে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটার পাশাপাশি দারিদ্র্যও কমে। এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল বলেন, ধীরগতিতে চলা বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা খুব দ্রুত ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে নারীদের। বিশ্বজুড়ে বৈষম্যমূলক আইন ও প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নারীকে পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দেয় না। এই দূরত্ব ঘুচলে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপির হার ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে আগামী দশকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বাড়তে পারে। তবে বৈষম্য কমিয়ে আনতে আইন সংস্কার হচ্ছে খুব ধীরগতিতে।


ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, মজুরিতে সমতা আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৭২.২ শতাংশ। বৈশ্বিক তালিকায় দেশের অবস্থান ৫৯।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *