তালেবান শাসনে দিশেহারা আফগান নারীরা

তালেবান শাসনে দিশেহারা আফগান নারীরা

নারী ডেস্ক: জীবনের সব আশা ছেড়ে দিয়ে আত্মঘাতী চিন্তার দিকে ঝুঁকছে আফগান নারীরা। আত্মঘাতী এই চিন্তা যেন মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে নারীরা। এ প্রসঙ্গে একজন মনোবিদ ডক্টর আমাল জানান, নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘোষণার দুই দিনের মধ্যে তিনি ১০৭টি কল পেয়েছেন তাদের সাহায্যের জন্য। তিনি প্রতিদিন ৭ থেকে ১০টি নতুন কল পান বলেও জানান তিনি। তার রোগীদের বেশিরভাগই মেয়ে ও তরুণী। দিন দিন তারা আশা হারাচ্ছে ও মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়ছে যে, তাদের বেশিরভাগই আত্মঘাতী চিন্তার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

নারী স্বাধীনতার ওপর তালেবানদের নিষেধাজ্ঞার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রমতে জানা যায়, নাদির নামের একজন বাসিন্দার মেয়ে যে কিনা নতুন স্কুলের মেয়াদের প্রথম দিনই আত্মহত্যা করে। এটি ঘটে এই বছরের মার্চে। নাদির অশ্রুশিক্ত চোখে জানান, তার মেয়ে স্কুল অনেক পছন্দ করত এবং বড় হয়ে দেশের সেবা করতে চেয়েছিল। তাই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার পথ। অন্যদিকে ২০ বছর বয়সি একজন মেয়ের বাবা কাঁদতে কাঁদতে জানান, ‘তার মেয়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়া। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাকে বসতে না দেওয়ায় সে সব আশা হারিয়ে ফেলে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’ একজন শিক্ষিকা যার নাম ছিল মেহের, তিনি ডক্টর আমালকে জানান, তিনি দুবার নিজের জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তালেবানরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ায় ওই শিক্ষিকা চাকরি হারান। যার ফলে তিনি ও তার পরিবার আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহ শিকারে তিনি দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এসব বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক যে, মানসিক রোগে ভুগছেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তালেবান কর্তৃপক্ষ মহিলা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় যেতে বাধা দেয়। ফলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির হুমকির শিকার হয় আফগান নারীরা। আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়লেও রিপোর্ট করছে না অনেক পরিবারই। তাই তথ্যের অভাবে সংকটের মাত্রা মূল্যায়ন করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের জন্য ‘সমর্থন দল’ গঠন করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার পরামর্শ দেন ডক্টর আমাল।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *