জীবনের বড় শোভা সন্তান

জীবনের বড় শোভা সন্তান

নারী ও শিশু ডেস্ক: সন্তান মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তিনি যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা। কাউকে আবার দয়া করে দুটোই দেন। আবার যাকে ইচ্ছা তাকে নিঃসন্তান রাখেন।
তাঁর এই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কারো নেই। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আসমানসমূহ ও জমিনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন অথবা তাদের পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত ৪৯-৫০)
মহান আল্লাহ্ সন্তান-সন্ততিকে মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের শোভা বানিয়েছেন। তাই সন্তান-সন্ততির প্রতি মানুষের মায়া-মমতা, ভালোবাসা স্বভাবজাত। এই ভালোবাসা ও বন্ধন মহান আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের কাছে প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম।’ (সুরা কাহফ: আয়াত ৪৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগ্যসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪)
তাই সন্তানকে এমনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, যাতে তারা মা-বাবার দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির মাধ্যম হয়। যাতে সন্তানের কারণে মা-বাবা দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত হয়। হাদিসে বর্ণিত আছে, মৃত্যুর পরও নেক সন্তানের দোয়া মা-বাবার উপকারে আসে। কিয়ামতের দিন নেক সন্তানের মা-বাবাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা হবে। তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া (চলমান সদকা); (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (নাসায়ি, হাদিস: ৩৬৫১)
অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, সাহাল ইবনে মুআজ আল-জুহানি (রহ.) সূত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মাতা-পিতাকে এমন মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো! (আবু দাউদ, হাদিস ১৪৫৩)
তাছাড়া পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরিবার-পরিজনের আমল-আখলাকের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম: আয়াত ৬)
তাই সন্তানকে দ্বিনি বিষয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি গুনাহ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। এমন কাজে সহযোগিতা করা যাবে না, যা তার দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে দেবে। তাকে আল্লাহবিমুখ করবে। বরং তাকে ছোট থেকেই আস্তে আস্তে ইবাদতের শিক্ষা দিতে হবে। ইবাদতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজে যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ করা অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস ৫০৯৪)
অন্য হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত হলে তাদের নামাজের নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স ১০ বছর হবে তখন (নামাজ আদায় না করলে) তাদের (প্রয়োজনে মৃদু) বেত্রাঘাত করো। (এবং) তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করো। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৫) এবং সন্তান যাতে বিপথগামী না হয়ে যায়, আল্লাহ ও মা-বাবার অনুগত থাকে, তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়া মহান আল্লাহ নিজেই শিখিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সূরা ফুরকান: আয়াত ৭৪)
মহান আল্লাহ আমাদের সব সন্তান লালন-পালনে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *