আলেমা হাবিবা আক্তার: জাওহার বারাসিয়া (রহ.) ছিলেন বাগদাদের বিখ্যাত নারী তাপস ও সুফি সাধক, যিনি আল্লাহর ভালোবাসায় রাজকীয় জীবন ছেড়ে সাধকের জীবন বেছে নেন এবং আমৃত্যু আল্লাহর প্রেমসাধনায় নিমগ্ন থাকেন। তিনি জগদ্বিখ্যাত সুফি জুনায়েদ বাগদাদি (রহ.)-এর সমসাময়িক ছিলেন, যিনি ২৯৭ হিজরিতে ওফাত লাভ করেন।
প্রাথমিক জীবনে জাওহার বারাসিয়া (রহ.) ছিলেন একজন রাজদাসী। আর কারো কারো মতে, রাজকন্যা। বাগদাদের রাজপ্রাসাদেই তিনি বেড়ে ওঠেন। তবে তাঁর পিতৃপরিচয় ও পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। পরিণত বয়সে বিখ্যাত সুফি আবু আবদুল্লাহ বারাসি (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক সাধনা ও আল্লাহপ্রেম তাঁকে মুগ্ধ করে। ফলে তিনি তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং রাজপ্রাসাদ ছেড়ে সাধকদের কাতারভুক্ত হন।
হাকিম বিন জাফর (রহ.) বলেন, আমরা একবার বাগদাদের বারাসে আবু আবদুল্লাহ বারাসি (রহ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তাঁর জাওহার নামে একজন ইবাদতগুজার স্ত্রী ছিলেন। আবু আবদুল্লাহ বারাসি (রহ.) খেজুরপাতার পাটিতে বসেছিলেন। আর তাঁর সামনেই বসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
পরবর্তী সময়ে আবার একদিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো এবং তিনি মাটিতে বসেছিলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার পাটির কী হলো? তিনি জবাব দিলেন, জাওহার আমার ভুল ভেঙে দিয়েছে। সে আমাকে বলেছে, হাদিসে কি বলা হয়নি যে কিয়ামতের দিন মাটি আদম সন্তানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি আমার ও তোমার মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করেছ। অথচ পরে আমার গর্ভেই তোমার স্থান হয়েছে। সুতরাং এই পাটি আমাদের দরকার নেই। এরপর সে পাটি সরিয়ে দিয়েছে।
রাত জেগে ইবাদত করা ছিল জাওহার বারাসিয়া (রহ.)-এর প্রিয় আমল। তিনি সাধারণত রাতে ঘুমাতেন না। জীবনী রচয়িতারা এর কারণ হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। একবার জাওহার (রহ.) স্বপ্নে একটি সুসজ্জিত তাঁবু দেখেন। তিনি জানতে চান, এই তাঁবু কার জন্য সুসজ্জিত করা হয়েছে? বলা হলো, তাহাজ্জুদের নামাজে তিলাওয়াতকারীর জন্য। এর পর থেকে তিনি আর রাতে ঘুমাতেন না। তাঁর স্বামী আবু আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, রাতে জাওহার আমাকে জাগিয়ে দিত এবং বলত, হে আবু আবদুল্লাহ! কাফেলা তো গন্তব্যে পৌঁছে গেল! অর্থাৎ রাত শেষ হয়ে আসছে, আল্লাহপ্রেমীরা আল্লাহর ভালোবাসা ও সান্নিধ্য উপভোগ করছে আর আপনি ঘুমিয়ে আছেন?
আবু আবদুল্লাহ বারাসি (রহ.) বলেন, একবার জাওহার আমাকে জিজ্ঞাসা করল-জান্নাতে কি জান্নাতি নারীদের সাজানো হবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। জবাব শুনে সে চিৎকার দিলো এবং জ্ঞান হারাল। জ্ঞান ফেরার পর আমি বললাম, তোমার কী হয়েছিল? সে বলল, আমি আমার অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখলাম, আমি একজন দুনিয়াপ্রেমী। সুতরাং আমি ভয় পেয়েছি, আল্লাহ না জানি আমাকে পরকালীন পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করেন।
জাওহার বারাসি (রহ.) স্বামী আবু আবদুল্লাহর সঙ্গে একটি জীর্ণ কুটিরে বসবাস করতেন। ধারণা করা হয়, তিনি বাগদাদে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।