দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ছয় ঋতুর বাংলাদেশ এখন বৈচিত্র্যহীন। ঋতুগুলো হারাতে বসেছে স্বাভাবিক আচরণ। ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে প্রতি দুই মাসকে একটি ঋতু হিসেবে ধরা হলেও প্রকৃতিতে কয়েকটি ঋতু এরই মধ্যে বৈচিত্র্য হারিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো শীত ও গ্রীষ্ম প্রধান দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। বছরের বেশিরভাগ সময়ই গরমের আধিক্যের কারণে শীতকালের স্থায়িত্বও কমে যাচ্ছে। আবার বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রকৃতিতে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুর অস্তিত্ব টের পাওয়া গেলেও শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত এ তিনটি ঋতু কখন আসে কখনই বা চলে যায়, টের পাওয়া যায় না। আবহাওয়ার এ বিরূপ আচরণে হুমকিতে পড়ছে জনজীবন ও জীববৈচিত্র্য। বাড়ছে রোগবালাই, ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
পৌষ মাস শুরু। সাধারণত ডিসেম্বর শুরুর আগেই শীতের আমেজ অনুভব করার কথা। কিন্তু ঢাকার মানুষ এর আমেজ পায় না। ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’-এর প্রভাবে বুধবার থেকে ডিসেম্বরে অসময়ের বৃষ্টি ঝরেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী রবিবারের পর থেকে কাক্সিক্ষত শীত জেঁকে বসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিকে শীতকাল ধরা হলেও ধীরে ধীরে এর পরিবর্তন হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ সময়ের ধরন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম ছিল। এতে এল নিনোর প্রভাব ছিল। জুন-জুলাইয়ে এ বছর রেকর্ড পরিমাণে কম বৃষ্টিপাত হয়। আর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি বেশি হলেও তা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কতগুলো প্রভাব এরই মধ্যে দৃশ্যমান।
তাপমাত্রা ও ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনও চোখে পড়ছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন হচ্ছে না। কদম, শিউলিসহ বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক ফুল যখন ফোটার কথা তখন ফুটছে না।’ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখতে পায়, সেখানে ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ছে না। গ্রীষ্মকাল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বর্ষাকাল তার সময় থেকে সরে যাচ্ছে। আষাঢ় বৃষ্টিহীন থাকলেও ভাদ্র-আশ্বিনে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শরৎ এলেও কাশফুল ও শিউলি চোখে পড়ছে না। হেমন্ত ও বসন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। আর শীতকালের ব্যাপ্তি কমে আসছে। এ গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘ছয় ঋতুর দুটি হেমন্ত ও বসন্ত প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। শীতকালের সময় ও ব্যাপ্তি কমে আসছে। আর এমনটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।’ আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে এখন অস্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। তাপপ্রবাহের স্থায়িত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে। প্রতি বছরই একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে দেশ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে।
এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা আরও বেড়ে যাওয়ার কথা।’ আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের ঝুঁকিও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং এর র্যাডিয়েশন, উঁচু গাছ কমে যাওয়া ও জলাভূমি ভরাটের কারণে এমন হচ্ছে।