জন্মত্রুটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বছরে ৩ লাখের বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়

মোরশেদা ইয়াসমিন পিউ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ১০০ নবজাতকের মধ্যে ৩.৬ শতাংশ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার শিশু মারা যায় জন্মগত ত্রুটির কারণে এবং ৩২ লাখ শিশু আজন্ম শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে দিন কাটায়। আর বিশ্বে প্রায় প্রতিবছর ৮০ লাখ শিশুর ৬ ভাগ মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৩.৩ মিলিয়ন শিশু জন্মের ৫ বছরের মধ্যে মারা যায়। শিশুমৃত্যুর চতুর্থ কারণ হিসেবে জন্মগত ত্রুটিকে বিবেচনা করা হয়।


চিকিৎসকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত জন্মগত ত্রুটির বেশির ভাগ কারণই অজানা। তবে জন্মগত ত্রুটির যেসব কারণ জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে বংশগত, জিনগত, রক্তসম্পর্কীয় বিবাহ, খুব কম বা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, অপুষ্টি, গর্ভকালীন ধূমপান ও মদ্যপান, সংক্রামক রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, খিঁচুনি, অপচিকিৎসা, তেজস্ক্রিয়তা, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ইত্যাদি।


২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবজাতক বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ৭ থেকে ৯ শতাংশেরই জন্মগত ত্রুটি পাওয়া গেছে। ১১ হাজার ২৩২ জনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের বেশির ভাগ এসেছে মধ্যম ও নি¤œ আয়ের পরিবার থেকে। বিএসএমএমইউর নবজাতক বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা এ ধরনের শিশুর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৮৯টির। এই সংখ্যা গত আট বছরে চিকিৎসা নিতে আসা মোট শিশুর ৭ দশমিক ০২ শতাংশ।


এমন অবস্থায় গত ৩ মার্চ পালিত হয় বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপের পাশাপাশি অভিভাবকদের কিছু বিষয় মাথায় রাখলে এবং আরও সতর্কতা অবলম্বন করলে অনেক ধরনের জন্মত্রুটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই সতর্কতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং শিশুদের জন্মগত ত্রুটি ও তাদের কারণগুলোর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৩ মার্চ বিশ্ব জন্ম ত্রুটি দিবস পালিত হয়ে থাকে।


বিএসএমএমইউর ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজ-অর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, ত্রিশোর্ধ্ব মেয়েদের গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন। কারণ মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি বোঝা যেতে পারে। এর জন্য ফিটাল ইকো, সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, অ্যামনিও সেন্টেসিস অথবা কোরিয়োনিক ভিলাস স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে। এছাড়া শিশুর জন্মের পরও ত্রুটিগুলো নির্ণয় করা যেতে পারে। তিনি বলেন, গর্ভধারণের আগেই মা-বাবার পূর্ব ইতিহাস জেনে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *