১৯৮০-এর দশকের শুরুটা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ, ওই সময় কার্যত অভিন্ন মাথাপিছু আয়ের এই দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ তাদের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছিল। দুটি দেশই ‘বিপ্লব’ ও ‘বিস্ময়কর’ কিছু একটা করতে যাচ্ছে বলে বিশ্ববাসীর মনে ধারণা জন্মাচ্ছিল। কিন্তু চীন যখন মানব-পুঁজির উন্নয়নের শক্ত ভিতের ওপর দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল, তখন ভারত তার প্রবৃদ্ধির এই দিকটিকে, অর্থাৎ মানবসম্পদকে খাটো করেছে। চীন এরপর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়েছে। অন্যদিকে ভারত যতটা শোর তুলেছিল, সে তুলনায় খুব কমই অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দুই দেশের ব্যবধানের পরিসর বেড়েছেই। ১৯৮১ সালে ভারতের নাগরিকদের গড় আয়ু ছিল ৫১ বছর। অন্যদিকে চীনের নাগরিকদের গড় আয়ু ছিল ৬৪ বছর। বিশ্বব্যাংক সেসময় চীনের এই গড় আয়ুকে ‘অসামান্য উচ্চমাত্রার’ সাফল্য বলে অভিহিত করেছিল।
বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ভারতের নাগরিকদের তুলনায় চীনের লোকেরা ভালো খেতে পারছে। এছাড়া চীন প্রায় সর্বজনীনভাবে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পেরেছে এবং দেশটির নারীরাসহ সব নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, মাও সে-তুংয়ের আমলে চীন লিঙ্গসমতার দিকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোর দিয়েছিল। নিকোলাস ক্রিস্টোফ ও শেরিল ইউডান তাঁদের যৌথভাবে লেখা বই হাফ দ্য স্কাই-এ উল্লেখ করেছেন, চীন (বিশেষ করে দেশটির শহর অঞ্চল) ‘নারীদের বেড়ে ওঠার সেরা জায়গা’ হিসেবে গড়ে উঠেছে। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি জন্মহার কমিয়েছে এবং শিশু পালন পদ্ধতিকে উন্নত করেছে।
শিল্পবিপ্লবের সূচনালগ্ন থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিটি দৃষ্টান্ত (যার মূল ভিত্তি হলো টেকসই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি) মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ ও কর্মশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাজারের উদারীকরণ চীনা ও ভারতীয় প্রবৃদ্ধিকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। তবে চীন মানবসম্পদ এবং লিঙ্গসমতা-এ দুটি স্তম্ভের ওপর তার সফল উন্নয়ন কৌশল গড়ে তুলেছে; যেখানে ভারত অনেক পিছিয়ে আছে।