ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)
চোখের সাদা অংশের উপর একধরনের স্বচ্ছ ঝিল্লি থাকে, যাকে বলে কনজাংটিভা (Conjunctiva) এবং এর প্রদাহজনিত অসুখকে বলে কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) বা চোখ ওঠা রোগ। এটা একটি সংক্রামক রোগ। ইদানীং দেশের অনেক জেলায় এই কনজাংটিভাইটিস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কিছুটা সতর্ক থাকলেই এ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি জীবাণু দিয়ে কনজাংটিভাইটিস হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা মূলত ভাইরাস দিয়ে হচ্ছে এবং এর মধ্যে অন্যতম প্রধান ভাইরাস হচ্ছে অ্যাডেনো ভাইরাস (Adenovirus)। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেও এই কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উপসর্গ
কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ লাল হয়ে যায়, চোখে কিছু একটা পড়েছে এরকম অনুভূতি বা অস্বস্তি হয়, চোখ চুলকায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ আলোক সংবেদনশীল হয়, ফলে আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। শুরুতে সাধারণত এক চোখ আক্রান্ত হয়, তবে তা দুই চোখেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই সমস্যা সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন থাকে।
কিভাবে এই অসুখ ছড়ায়
কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ যদি কোনোভাবে অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তির চোখে যায় তাহলে সেও কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, বিছানা-বালিশ ইত্যাদি সাময়িক সময়ের জন্য আলাদা করা উচিৎ। কারণ তোয়ালে, বালিশ, বিছানার চাদর ইত্যাদিতে যদি আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ থেকে বের হওয়া সেই তরল পদার্থ লাগে এবং পরবর্তীতে কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি তা স্পর্শ করে তাহলে সেই সুস্থ ব্যক্তির হাতে তা লাগবে এবং সে যদি সেই হাত দিয়ে কখনো তার নিজের চোখ স্পর্শ করে তাহলে সেও সেই অসুখে আক্রান্ত হবে। তাই যখন তখন অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা উচিৎ নয়।
অনেকে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে কালো চশমা পড়ে। কিন্তু এটা দিয়ে কনজাংটিভাইটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে কালো চশমা ধুলো-বালি ও আলোক সংবেদনশীলতা থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারে।
কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয় কী?
– চোখে যখন তখন হাত দেওয়া, চোখ কচলানো পরিহার করতে হবে।
– চোখে বারবার পানি দেওয়া ঠিক নয়। যদি চোখে আঠালো পদার্থ জমে তাহলে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে চোখটা হালকাভাবে মুছে দিতে হবে। পরিস্কার টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে তা ব্যবহারের পর তা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে।
– আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে এবং চোখ বেশি চুলকালে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
– আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কখনো চোখে কম দেখে তাহলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
[লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য); সহকারি রেজিস্ট্রার, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]