রাবেয়া বেবী: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও সাধারণ হিসাবে করোন প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে নারী সেবা গ্রহীতারা। চলতি বছর এপ্রিল মাসের তথ্যমতে, এজেন্ট ব্যাংক হিসাবে পুরুষের তুলনায় এগিয়ে আছে নারীরা। এ সময় নারী এজেন্ট ব্যাংক হিসাবধারী যেখানে ৯৫ লাখ, সেখানে পুরুষের সংখ্যা ৯৪ দশমিক ৬২ লাখ। কোথাও কোথাও পুরুষের তুলনায় নারী ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেশি। সরকারের নানা সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমসহ বেশ কিছু নারীবান্ধব সিদ্ধান্ত এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞজনেরা। তবে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এই অংশগ্রহণ বাড়াতে সম্পত্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
কিছু পরিসংখ্যান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকে নারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৪৩.৭৯ লাখ, যেখানে পুরুষের হিসাব সংখ্যা ছিল ৪৯.৭৮ শতাংশ। ২০২১ সালের একই সময় নারীর হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬.৭১ লাখ, এ সময় পুরুষের এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ছিল ৭৯ লাখ। এক বছর পরে একই সময় অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নারীর এজেন্ট হিসাব সংখ্যা বেড়ে হয় ৮৪.২১ লাখ, একই সময় পুরুষের হিসাব সংখ্যা ছিল ৮৭.৯৫ লাখ। আর চলতি ২০২৩ সালে পুরুষের তুলনায় নারীর হিসাব সংখ্যা বেড়ে গেছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়েও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তথ্যমতে, ৫.৭২ কোটি নারী মোবাইল ব্যাংক হিসাব সেবা গ্রহণ করে। এক বছর পরে ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৭২ কোটি। তিন বছর পরে একই সময়ে ৮ কোটি নারী মোবাইল ব্যাংক হিসাব সেবা গ্রহণ করে। তিন বছরে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
কেন বাড়ছে নারীর হিসাব: এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারীবান্ধব বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রদক্ষেপ নিয়েছে। নারীরা বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন সঞ্চয়পত্রে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ও কম সুদে ঋণ ব্যবস্থাসহ আয়ের ওপর রয়েছে বাড়তি করছাড়-সুবিধা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা বেশির ভাগ নারী গ্রহণ করেন। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা ঘরে বসেই তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পান। ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) যে ঋণ দেয়, তার ১০ শতাংশ অর্থ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ ১৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নারী উদ্যোক্তাদের ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণসুবিধা রয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকিংয়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।
তবে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে উইমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সভাপতি সালিমা আহমেদ এমপি বলেন, ব্যাংকগুলোর কতিপয় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সংবেদনশীল নন। নারী ঋণ ফেরত দিতে পারবে না এমন একটা ধারণাও আছে। ঋণ পেতে পুরুষের চেয়ে বেশি শর্ত পূরণ করতে হয় নারীদের।