মুফতি আইয়ুব নাদীম: মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) পুরো পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়ামায়া, মমতা, ভালোবাসায় মহাসাগরস্বরূপ ছিলেন। তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন বা সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ। উম্মতের নাজাত-মুক্তি, সর্বাঙ্গীন সফলতা ও কল্যাণ কামনায় তার হৃদয় সদা ব্যাকুল ও অস্থির থাকত।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রসুল এসেছে। তোমাদের যে কোনো কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সুরা তওবা ৯: ১২৮)
আমাদের মতো উম্মতকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ নিজের দুটি নাম তার হাবিবের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন-একটি ‘রউফ’, আরেকটি ‘রহিম’। এত মায়া-দয়ার পরেও যখন মক্কার কাফের-মুশরিকরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বৈরী আচরণ করতে থাকল এবং নানাভাবে কষ্ট দিতে থাকল। আর মহানবি (সা.) মনে দুঃখ পেলেন, তখন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে সান্ত¡নার বাণী শোনালেন। এ ব্যাপারে একটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘(হে নবি, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়) তারা (কুরআনের) বাণীর প্রতি ইমান না আনলে যেন তুমি আক্ষেপ করে তাদের পেছনে নিজের প্রাণনাশ করে বসবে।’ (সুরা কাহাফ: ৬)
আরেকটা আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘লোকে কী বলে, নবি নিজে এটা রচনা করে নিয়েছে? না, (হে নবি!) এটা তো সত্য, যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে, যাতে তুমি এর মাধ্যমে সতর্ক করো এমন এক সম্প্রদায়কে, যাদের কাছে তোমার আগে কোনো সতর্ককারী আসেনি, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়।’ (সুরা আহযাব: ৩) অপর এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! ঐ সব প্রতিমা বিপুলসংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং যে কেউ আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভুক্ত। আর যে কেউ আমাকে অমান্য করল (তার বিষয়টা আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি) আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইব্রাহিম: ৩৬)
এর দ্বারা বোঝা গেল, যারা আমার কথা মানবে না, তারা আমার দলে থাকবে না। তবে আমি তাদের জন্য বদদোয়া করি না। তাদের বিষয়টা আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুতরাং আপনি তাদের হেদায়েত দিয়ে মাগফিরাতের ব্যবস্থাও করতে পারেন। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য। আমি দিনের বিষয়সমূহ তোমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকি।’ (আবু দাউদ: ৮)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘আমার ও মানুষের উদাহরণ এমন লোকদের মতো, যে আগুন জ্বালাল, যখন তার চারদিক আলোকিত হয়ে গেল, কীটপতঙ্গ (যেগুলো আগুনে পড়ে) তারা তাতে পড়তে লাগল, তখন সে সেগুলোকে ফেরানোর চেষ্টা করল, কিন্তু সেগুলো তাকে পরাজিত করে, আগুনে পতিত হলো। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের কোমর ধরে ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তোমরা তাতেই (শয়তানের প্ররোচনায়) পতিত হয়ে যাও।’ (বুখারি: ৬৪৮৩) আরেকটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ প্রত্যেক নবিকে এমন একটি বিশেষ দোয়ার অধিকার দিয়েছেন, যা কবুল করা হবে, প্রত্যেক নবি সেই দোয়া দুনিয়ায় করেছেন এবং তা কবুলও হয়েছে। আর আমি সেই বিশেষ দোয়াটি কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের সুপারিশের জন্য রেখে দিয়েছি।’ (বুখারি: ৬৩০৪)