মাইমুনা আক্তার: পৃথিবীর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাঞ্জল ভাষা আরবি। আমাদের প্রিয় নবি (সা.) আরবি ভাষী ছিলেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনও আরবি ভাষায়ই অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি তা অবতীর্ণ করেছি, আরবি ভাষার কুরআন, যাতে তোমরা ভালোভাবে বুঝতে পারো।’ (সূরা ইউসুফ: আয়াত ২)
আমাদের নবিজি ছিলেন অত্যন্ত বিশুদ্ধ ও সুমধুর ভাষার অধিকারী। একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহানবি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল, না আপনি বাইরে ভিন দেশে কোথাও গেছেন, না আপনি বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে ওঠা-বসা করেছেন, তবু আপনি এত সুন্দর শুদ্ধভাষা কোথা থেকে পেলেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসমাইল (আ.)-এর ভাষা ও পরিভাষা যা দুষ্প্রাপ্য ও বিলীন হয়ে গিয়েছিল তা আমার কাছে জিবরাইল (আ.) নিয়ে আসেন এবং তা আমি আত্মস্থ করেছি। (মাদারিজুন নবুয়ত)
ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে প্রিয় নবিজি (সা.) আরো বলেন, ‘সর্বপ্রথম ‘স্পষ্ট আরবি’ ভাষা ব্যক্ত করেন ইসমাঈল। যখন তিনি ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সের’। (তাবরানি : ৪৩৪৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১/১৮০)
এখানে ‘স্পষ্ট আরবি’ অর্থ ‘বিশুদ্ধ আরবি ভাষা’ এটাই ছিল কুরায়শি ভাষা, যে ভাষায় পরে কুরআন অবতীর্ণ হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সব ভাষাই আল্লাহ কর্তৃক ইলহামের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ইসমাঈল ছিলেন বিশুদ্ধ কুরায়শি আরবি ভাষার প্রথম ইলহাম প্রাপ্ত মনীষী। এটি ইসমাঈলের জন্য একটি গৌরবময় বৈশিষ্ট্য। এ জন্য তিনি ছিলেন ‘আবুল আরব’ বা আরবদের পিতা।
অন্যান্য নবিগণের ন্যায় যদি ইসমাঈল (আ.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত পেয়ে থাকেন, তাহলে বলা চলে যে ইসমাঈলের নবুয়তি মিশন আমৃত্যু মক্কাকেন্দ্রিক ছিল। তিনি বনু জুরহুম গোত্রে তাওহিদের দাওয়াত দেন। ইসরাঈলি বর্ণনানুসারে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন। কাবা চত্বরে রুকনে ইয়ামানির মধ্যে তাঁর কবর হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। তবে মক্কাতেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, এটা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়।
ইসমাঈলের বড় মহত্ত্ব এই যে তিনি ছিলেন ‘জবিহুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর রাহে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী এবং তিনি হলেন শেষনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মহান পূর্বপুরুষ। আল্লাহ তাঁর ওপর শান্তি বর্ষণ করুন। তাঁর সম্পর্কে ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনীতে আলোচিত হয়েছে। (নবীদের কাহিনি)