অনলাইন ডেস্ক: ট্র্যাডিশনাল তথা আয়ুর্বেদীয় ওষুধ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে তারা এই খাতের ওষুধের সব তথ্য-প্রমাণ ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।
আয়ুর্বেদ ওষুধের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরভিত্তিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাটি জানায়, ‘ডাব্লিউএইচও ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন গ্লোবাল সামিট’ শীর্ষক সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নীতিনির্ধারক এবং এই খাতের পণ্ডিতদের এক কাতারে এনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জোর দেওয়া।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের গান্ধীনগরে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন চলে শুক্রবার পর্যন্ত। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো নিয়ে গঠিত জি২০ জোটের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনের পাশেই ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের সম্মেলনটি চলছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার এই চিেিকসবা নেয়।
এ বিষয়ে ডাব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘ডাব্লিউএইচও নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও ন্যায়সংগত ব্যবহারের জন্য এ ধরনের ওষুধের নীতি, মান ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে প্রমাণপত্র ও তথ্য-উপাত্ত তৈরি করতে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, আয়ুর্বেদ সঠিক উপায়ে, কার্যকরভাবে এবং সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ব্যবহার করলে তা মূল্যবান কিছু হবে।
গান্ধীনগরের সম্মেলনের আগে জাতিসংঘভুক্ত ডাব্লিউএইচও অনলাইনে মানুষের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখে, তারা হোমিওপ্যাথি, প্রাকৃতিক ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করে কি না। এর পরই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়। সমালোচকরা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের বৈশ্বিক সংস্থাটি একটি ছদ্ম বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (টুইটারের পরিবর্তিত নাম) ডাব্লিউএইচও জানায়, তারা সমালোচকদের এই উদ্বেগ সম্পর্কে অবগত এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো যাতে ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয় তা খেয়াল করা হবে।
নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব ও ডাব্লিউএইচও সায়েন্স কাউন্সিলের চেয়ার হ্যারল্ড ভার্মুস ভিডিওমাধ্যমে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘আয়ুর্বেদ যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাস্তব জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, কোন উপাদানগুলো এতে ব্যবহৃত হয় এবং কেনই বা কিছু ক্ষেত্রে সেসব কার্যকর ভূমিকা রাখে? আরো জরুরিভাবে বোঝা দরকার, আয়ুর্বেদ চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন ওষুধগুলো সত্যিকার অর্থে কাজেই লাগে না।’
আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্যসেবা সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়, যা নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা আয়ুর্বেদকে স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার একটি জ্ঞান, দক্ষতা ও চর্চা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
কিন্তু এই ধারার বেশ কিছু চিকিৎসাপদ্ধতির কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য-ভিত্তি নেই। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণবাদীরা অভিযোগ করেন, এ ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি বাঘ, গণ্ডার, প্যাংগোলিনের মতো বিপদাপন্ন প্রাণী প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে ঠেলছে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় বাসায় তৈরি চিকিৎসার প্রচলন বাড়ে। মহামারিকালে আফ্রিকার মাদাগাস্কার দ্বীপের প্রেসিডেন্টের পরামর্শে আর্টেমিসিয়া নামের একটি গাছ থেকে প্রস্তুত করা ‘গ্রিন হারবাল ড্রিংক’ বেশ সাড়া ফেলে। এই গাছ ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও এর মাধ্যমে কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসাপদ্ধতির ব্যাপক সমালোচনা করেন চিকিৎসকরা।
চীনে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ইউরোপীয় স্বাস্থ্যবিদরা একেও প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতির মতো নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দেন।
একটি বিবৃতিতে ডাব্লিউএইচওর গবেষণাপ্রধান জন রিডার বলেন, অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো অগ্রসরমান বৈজ্ঞানিক নিয়ম-নীতি আয়ুর্বেদ ওষুধের ক্ষেত্রেও কঠোর মান বজায় রেখে প্রয়োগ করা উচিত।
বর্তমানে ডাব্লিউএইচওর ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৮ সালের পর ১৭০টি দেশই স্বীকার করেছে, তাদের দেশে ট্র্যাডিশনাল ও সমপর্যায়ের চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে। তবে মাত্র ১২৪টি দেশে এ সংক্রান্ত আইন ও নিয়ম-নীতি রয়েছে, এর মধ্যে অর্ধেকের জাতীয় নীতি রয়েছে।