অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

অর্থনৈতিক ডেস্ক: বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্কার না হলে প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গতিও কমে যাবে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ‘দ্য কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম-চেঞ্জ অব ফেব্রিকস’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করে বলা হয়েছে-প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, আর্থিক ও নগরায়ণ এই তিন খাতে সংস্কার করতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আলোচনার আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সংস্কারের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন খাতে সমস্যা আছে। নানা কারণে এই খাতগুলোয় অনেক ব্যর্থতা আছে। এসব খাতের সংস্কার করতে হবে। অবশ্যই আমরা ভালো সংস্কার করব, জনগণ সংস্কার চায়, পুরো সংস্কার না পারলেও কিছুটা করতে পারব। এই বিষয়ে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’ সংস্কারের সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামনে রাজনৈতিক সংঘাত নয়, অনিশ্চয়তা আছে। রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। তবে আশা করি, ঝড় আসবে না। রাজনীতিবিদদের আলোচনার পথে আসতে হবে, সভ্যতার পথে আসতে হবে। লাঠিসোঁটা দিয়ে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। সংস্কারের উদ্যোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জোরকদমে হাঁটতে পারব না। তবে সামনে এগিয়ে যাব। আপনারা যতটা জোরকদমে চান, ততটা জোরকদমে হয়তো হাঁটতে পারব না।’

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্কার না হলে ২০৩৫ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। আর মোটামুটি ধরনের সংস্কার হলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভালো রকম সংস্কার হলে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যা বাণিজ্যে সক্ষমতা কমাচ্ছে, তাই করহার যৌক্তিক করা প্রয়োজন। উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যবর্তী পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশে এখন গড়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, যা চীন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মতো দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তা ছাড়া বাণিজ্যের খরচও বেশি। শুল্ক পর্যায়ে সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়িয়ে বাংলাদেশের জিডিপি ও রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।

ব্যাংক খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কিন্তু দেশের আর্থিক খাত অতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে আধুনিক নগরায়ণ বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়ণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিকস’ প্রতিবেদনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ নোরা ডিহেল ও পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, এসবিকে টেক ভেঞ্চারস ও এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশীর কবির।

বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চ্যান বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে শীর্ষ ১০ দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যেমন অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং নীতি সংস্কার সময়ের দাবি। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উপনীত হতে চাইছে। এই প্রত্যাশা পূরণে শক্তিশালী এবং রূপান্তরমূলক নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *